সশস্ত্র এক দলের নেতা নিহত হওয়ার পর লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় নগরীর কেন্দ্রস্থলসহ বিভিন্ন এলাকায় গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে বলে জানিয়েছেন ত্রিপোলির তিন বাসিন্দা।
নিহত ওই নেতার নাম আব্দুলঘানি কিকলি। তিনি ত্রিপোলির ঘনবসতিপূর্ণ আবু সালিমভিত্তিক প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী সাপোর্ট ফোর্স অ্যাপারেটাস (এসএসএ)-এর নেতা ছিলেন। এসএসএ, ২০২১ সালে জাতিসংঘ সমর্থিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা জাতীয় ঐক্য সরকারের (জিএনইউ) প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের অধীনস্থ একটি বাহিনী।
জিএনইউয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় নাগরিকদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ঘরে অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছে। বার্তাটি প্রচারের পর শহরের রাস্তাগুলোতে গাড়িচালকরা দ্রুত বাড়ি ফেরার জন্য তাড়াহুড়া শুরু করেন।
মঙ্গলবার ভোররাতে জিএনইউয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আবু সালিম এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
ত্রিপোলির এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমি ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শুনেছি, আকাশে লাল আলো দেখেছি।” অপর দুই বাসিন্দা জানিয়েছেন, পুরো আবু সালিম ও সালাহ ইদ্দিন এলাকাজুড়ে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
এ অবস্থায় ত্রিপোলি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় প্রশাসন পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সব ফ্যাকাল্টি ও বিভাগের ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
লিবিয়ায় থাকা জাতিসংঘ মিশন সব দলকে অবিলম্বে লড়াই বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে বেসামরিকদের রক্ষায় তাদের দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে মিশন বলেছে, “বেসামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।”
ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ায় সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকেই অস্থিরতা চলছে। ২০১১ সালে নেটো সমর্থিত গণঅভ্যুত্থানে গাদ্দাফির পতন ও নিহত হওয়ার পর ২০১৪ সালে দেশটি পূর্বাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয় উপদলগুলোর মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
২০২০ সালের অস্ত্রবিরতির মধ্য দিয়ে বড় ধরনের লড়াই থেমে গেলেও রাজনৈতিক সংকট নিরসনে প্রচেষ্টা এখনো ব্যর্থ। বড় বড় উপদলগুলো প্রায়ই প্রাণঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং দেশের অর্থনৈতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে।
ত্রিপোলি ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জিএনইউ এবং দেশটির অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠান অবস্থান করছে। এই এলাকায় কয়েকটি প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র উপদল রয়েছে, যারা প্রায়ই তীব্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।