সংস্কার শেষে নির্বাচনই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ: রুহিন হোসেন প্রিন্স

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।

তিনি বলেন, “আমরা সরকারকে বলেছি, আপনাদের যে প্রধান কাজ, সেটা ছাড়া অন্যদিকে গেলে সমস্যা হতে পারে। এটা রেগুলার সরকার নয়, ইউনিফাইড সরকারও নয়। এখানে নানা পথের মানুষ রয়েছেন।

“সুতরাং গুরুত্ব দেওয়া দরকার—ভালো নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার প্রয়োজন, তা করেই নির্বাচনের পথরেখা নির্ধারণ করা দরকার। আমরা যতটা পারি, সেই সংস্কারের কাজকে এগিয়ে নেব। আমি প্রত্যাশা করব, আপনাদের মাধ্যমে সরকার এটিকে (নির্বাচন) প্রধান কাজ হিসেবে নেবে।”

গত ৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপেও সিপিবি এ বক্তব্য তুলে ধরেছে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “আমরা বরাবরই বলে এসেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু অন্তর্বর্তীকালীন কাজ রয়েছে। রুটিন কাজের বাইরে যদি বড় কোনো কাজে হাত দেওয়া হয়, তাহলে তা কঠিন হয়ে যাবে।

“এই কঠিন কাজ করতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়াই এখন অন্যতম প্রধান কাজ হওয়া উচিত।”

সিপিবি মনে করে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনপন্থা নির্ধারণ করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, “ঐকমত্য আমরা চাই, কিন্তু চলমান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে অনৈক্যের ধারা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পুরোপুরি ঐকমত্য গঠন কঠিন হতে পারে। তাই যতটুকু ঐকমত্য সম্ভব, সেটার ভিত্তিতেই এগিয়ে যেতে হবে।

“প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে যদি আমরা নির্বাচন করতে পারি—এক্ষেত্রে ‘প্রয়োজনীয়’ বলতে বোঝানো হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা দরকার—তাহলে এটিই হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।”

সরকারের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “সরকারের শুরুতে এমন কিছু বক্তব্য তৈরি হলো, যা মুক্তিযুদ্ধকে রিপ্লেস করে সাতচল্লিশের ধারাবাহিকতায় চব্বিশ তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। এতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করব, এসব বিতর্ক বন্ধ হবে।”

এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ স্বাগত বক্তব্য দেন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি কমিশন গঠন করে।

কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়।

সেদিন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চায় ঐকমত্য কমিশন। ৩৪টি দল তাদের মতামত তুলে ধরে, যার মধ্যে সিপিবিসহ ৩২টি দল প্রথম পর্যায়ের সংলাপে অংশ নেয়।

সিপিবির প্রতিনিধি দলে ছিলেন সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, মিহির ঘোষ, এ এন রাশেদা, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, কাজী রুহুল আমিন, রাগিব আহসান মুন্না, সাজেদুল হক রুবেল, আবিদ হোসেন ও ফজলুর রহমান।

ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক ও বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *