ইশরাককে মেয়র ঘোষণার রায় ও গেজেট স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও গেজেট স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। আদালত বলেন, যেসব প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে, তা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের মৌলিক ম্যান্ডেটের আওতায় পড়ে।

লিভ টু আপিলকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন জানান, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করায় বিলম্ব মার্জনা করে আপিল গ্রহণের কথা বলেছেন হাইকোর্ট। আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন কমিশন। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত একত্রে বিবেচনা করলে বোঝা যায়, নির্বাচন কমিশনকে আপিল করার জন্য বলা হয়েছে, যা এত দিন তারা করেনি। ফলে নির্বাচন কমিশনকে আপিল করতেই হবে, না করলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অন্যদিকে ইশরাকের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, গেজেট স্থগিত চাওয়া হলেও আপিল বিভাগ তা স্থগিত করেননি। আদালত বলেছেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। যেহেতু কমিশন আপিলের পক্ষ হয়নি এবং আপিল করার যুক্তিও নেই বলে তারা পূর্বে জানিয়েছে, তাই আজকের আদেশে লিভ দেওয়া হয়নি, কোনো স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি এবং আবেদন নিষ্পত্তি করে বলা হয়েছে যে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।

লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি হয় গতকাল। আদালত নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য শুনতে নোটিশ ইস্যু করে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। আজ শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইয়াছিন খান। লিভ টু আপিলকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও এ কে এম এহসানুর রহমান।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন তাপস। ওই নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফলাফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ১৯ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ইশরাকের করা নির্বাচনী মামলায় চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল রায় দেন। রায়ে শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণার আদেশ বাতিল করা হয় এবং ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা হয়। আদালতের রায় অনুসারে গত ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে।

এই রায়ের ও গেজেট কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে চলতি মাসে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ রিট করেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২২ মে রিট খারিজ করেন। এরপর গত সোমবার রায়ের ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল করেন রিট আবেদনকারী। পরদিন চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। শুনানি নিয়ে আজ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *