এনএসসির মনোনয়ন বাতিল, বিসিবি সভাপতির পদে ফারুক আহমেদ থাকবেন কি না নিয়ে অনিশ্চয়তা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র নয় মাস পর বড় ধরনের চাপে পড়েছেন ফারুক আহমেদ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বৃহস্পতিবার রাতে তার বিসিবি পরিচালক পদে মনোনয়ন বাতিল করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিসিবির নেতৃত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে এবং প্রশ্ন উঠেছে—ফারুক আহমেদ এখনো সভাপতি হিসেবে থাকতে পারবেন কি না।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিসিবির স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখা এবং বিপিএল নিয়ে গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে এনএসসির যুগ্মসচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন।

বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বোর্ডে নির্বাচিত পরিচালকদের পাশাপাশি এনএসসির মনোনয়নে দুজন পরিচালক থাকেন। গত মেয়াদে এই দুটি পদে ছিলেন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ও জালাল ইউনুস। গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তাদের পদ ফাঁকা হয়। এরপর ওই দুটি পদে ফারুক আহমেদ ও নাজমূল আবেদীনকে মনোনয়ন দেয় এনএসসি। পরে পরিচালকদের ভোটে ফারুক আহমেদ সভাপতি নির্বাচিত হন। তবে এবার সেই মনোনয়ন বাতিল করায় ফারুকের সভাপতির পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তবে অনেকের মতে, ফারুক এনএসসি মনোনীত হলেও তিনি বোর্ডের নির্বাচিত সভাপতি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে বা অযোগ্য বিবেচিত না হলে সরকার তাকে সরাতে পারে না। গঠনতন্ত্রে অনাস্থা প্রস্তাবের সুযোগ না থাকায় আগেই ফারুক জানান, তিনি পদ ছাড়বেন না।

এরই মধ্যে আটজন পরিচালক তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। জবাবে ফারুকও তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তোলেন। অবশেষে এই টানাপোড়েন মনোনয়ন বাতিলের মধ্য দিয়ে নতুন মাত্রা পায়।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি) জাতীয় বোর্ডে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ অনুমোদন করে না। অতীতে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কা এই ধরনের হস্তক্ষেপের কারণে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে। বিশ্লেষকদের মতে, বিসিবির নেতৃত্বে জোর করে পরিবর্তন আনলে বাংলাদেশ ক্রিকেটকেও সংকটে পড়তে হতে পারে।

বেশ কয়েকজনের ধারণা, এনএসসির মনোনয়ন বাতিলের ফলে ফারুকের আর সভাপতির দায়িত্বে থাকা উচিত নয়। পাশাপাশি, বিসিবির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে ফারুককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কি না, সেটিও বড় প্রশ্ন হিসেবে উঠে এসেছে।

এদিকে ফারুক আহমেদের জায়গায় বিসিবিতে কাজ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান ও সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তিনি জানিয়েছেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বিসিবিতে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছেন এবং তিনি আগ্রহী। যদিও তিনি সরাসরি সভাপতির দায়িত্বের কথা বলেননি, তবে এনএসসি ইতোমধ্যে তাকে বিসিবির এক কাউন্সিলরের পদে মনোনীত করেছে, যা সভাপতির দায়িত্ব পালনের একটি পূর্বশর্ত।

সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপে ফারুক আহমেদ বলেছেন, “এখনই কিছু বলতে চাই না। তবে আমি এখনও পদত্যাগ করিনি। আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *