বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির দাবিতে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি না পাওয়া সনদধারীদের সচিবালয়মুখী মিছিল সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ।
রোববার বেলা দেড়টার দিকে সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটকের কাছে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের মিছিলটি।
আর আগে সকালে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এ সনদধারীরা ‘এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষক ফোরাম’ এর ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন।
১-১৭তম ও ১-১২তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরি না পাওয়া সনদধারীরা আলাদাভাবে লং মার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি ডাকেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, “অনুরোধের পরেও সচিবালয়ের এলাকায় প্রবেশ করায় বাধ্য হয়ে ৩/৪টি সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে হয়েছে।”
তবে ৭টি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার কথা বলেছেন শাহবাগ থানার পেট্রোল ইন্সপেক্টর জয়নাল আবেদীন।
‘নিবন্ধিত নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষক ফোরাম’ এর সভানেত্রী নীলিমা চক্রবর্তী বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আজকে এখানে অবস্থান নিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের ওপরে এই হামলা হল। এটা ক্ষোভের, এটা বেদনার, নিন্দার ভাষা নেই।
“কেন গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হচ্ছে না? কেন অসহায় কিছু মানুষ দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি? এর আমরা অবসান চাই।”
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাব মোড়ে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি ছিল থমথমে।
এসময় ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, “আমরা যতটুকু জেনেছি পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হয়েছে। সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সচিবালয় অভিমুখে তাদের লং মার্চ কর্মসূচি ছিল। সকাল থেকেই তারা কর্মসূচি পালন করেছে প্রেস ক্লাবের সামনে। তারপর হঠাৎ দুপুর দেড়টার সময় তারা এখানে এসেছিল।”
তিনি বলেন, “ওনাদের (আন্দোলনকারীদের) আমি পাঁচজনকে সচিবালয় পাঠাইছিলাম যে সচিবালয়ে উনারা গিয়ে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে কথা বলে তাদের বিষয়গুলো আপডেটগুলো জেনে আসুক। তো তাদের এই পাঁচজন গেছে। যাওয়ার পরে ওই পাঁচজন মনে হয়, ওখানে তারা এরকম বলছে যে, এরকম তারা এখানে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ওখান থেকে যাবে না, বা এর বাইরে আর কোনো সুযোগ নাই।”
উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, “তারা আবার এই যে লিংক রোডে চলে আসে, লিংক রোডে যথারীতি আমাদের একটা ব্যারিকেড আছে, ব্যারিকেডটা যখন ভাঙার চেষ্টা করে তখন পুলিশ প্রথমে বাধা দেয়, ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু এরপরেও তারা মানছিল না, একটু বেপরোয়াও হয়ে গিয়েছিল।
“সচিবালয়েতো আমরা আসলে যেতেও দিতে পারি না। ওখানেতো ১৪৪ ধারা জারি করা আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের মনে হয় এক দুই রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে হয়েছে। এতে আমাদের দুই-একজন পুলিশ সদস্যও সামান্য আহত হয়েছেন।”
শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে —
১৭তম ব্যাচের নিবন্ধিত প্রার্থীদের জন্য আপিল বিভাগের রায় অনুসারে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্তত একবার আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে।
১৭তম ব্যাচের বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে।
আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএ-র সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের দাবিতে ৫ মে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আন্দোলনকারীরা ঢাকার ইস্কাটনে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করেন।
২০২৪ সালের মার্চেও সরাসরি নিয়োগের দাবিতে এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে দুইদিন মানববন্ধন করেছিলেন শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা।