যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শহর ও নগরগুলোতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। ‘নো কিংস’ নামের একটি গোষ্ঠী এ বিক্ষোভ সংগঠিত করেছে।
ট্রাম্পের উদ্যোগে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত এক বিরল সামরিক প্যারেডের বিরোধিতা করে এই বিক্ষোভ দেখানো হয়। এর আগে থেকেই ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে ঘিরে লস অ্যাঞ্জেলেস ও অন্যান্য শহরে বেশ কয়েকদিন ধরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছিল।
নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া ও হিউস্টনে জনতা যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা দুলিয়ে ও ট্রাম্পবিরোধী বক্তব্য লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। এসব শহরের সমাবেশগুলোতে আইনপ্রণেতা, ইউনিয়ন নেতা ও আন্দোলনকারীরা বক্তব্য রাখেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ২৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে সামরিক প্যারেডের উদ্যোগ নেন ট্রাম্প। দিনটি তার ৭৯তম জন্মদিনের সঙ্গে মিলে গেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ওয়াশিংটন ডিসি এলাকায় বজ্রঝড়ের পূর্বাভাস থাকায় ঘোষিত সময়ের আগেই প্যারেড শুরু করা হয়।
প্যারেডে কেউ কোনো ধরনের প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে ‘অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ করে তা দমন করা হবে’ বলে ট্রাম্প আগেই সতর্ক করেন।
সংগঠকরা জানিয়েছেন, দেশজুড়ে কয়েকশ বিক্ষোভে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে।
ফিলাডেলফিয়ার বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় লাভ পার্কে জড়ো হয়। এখানে উপস্থিত সেবিকা ক্যারেন ভ্যান ট্রিয়েস্ট (৬১) বলেন, “আমি শুধু অনুভব করেছি আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা উচিত।”
তিনি জানান, সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো থেকে ট্রাম্পের কর্মী ছাঁটাই তার রাস্তায় নেমে আসার অন্যতম কারণ।
সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম যে শহরগুলোতে হয়েছিল সেগুলোর একটি লস অ্যাঞ্জেলেস। এই শহরটিতে আগে বেশ কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ, কখনো কখনো সহিংস প্রতিবাদ হওয়ায় নেতারা ও আইনপ্রয়োগকারীরা উচ্চ সতর্কাবস্থায় ছিলেন।
এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের ক্রোধ উপেক্ষা করে লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ দমনে অঙ্গরাজ্যের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেন।
শনিবার নাগরিক অধিকার গোষ্ঠী ব্রাউন বেরেটস এর সদস্য হোসে অ্যাজেটক্লা লস অ্যাঞ্জেলেসে বলেন, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতিবাদ করতে তিনি রাস্তায় নেমে এসেছেন।
“এটা কঠোর না, এটা অশুভ। আপনি পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেন না,” বলেন তিনি।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ফেডারেল ভবনের কাছে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ন্যাশনাল গার্ডের সেনাদের সংঘর্ষ হয়েছে আর জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে সেখানে কাঁদুনে গ্যাস ছোড়া হয়েছে। কিন্তু এক কী দুই ব্লক দূরে শত শত বিক্ষোভকারী শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়।
ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হওয়া সত্ত্বেও মতামত জরিপগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে তার অভিবাসন নীতি জনগণের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
গত বছর সিবিএস ও ইউগভের করা এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে আছে এমন অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার ট্রাম্পের নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৫৪ শতাংশ আমেরিকান, আর বিরোধিতা করেছেন ৪৬ শতাংশ।
প্রায় ৪২ শতাংশ আমেরিকান জানিয়েছেন, ট্রাম্পের অভিবাসন কর্মসূচী তাদের নিরাপদ করে তুলছে আর ৫৩ শতাংশ বলেছেন, তিনি বিপজ্জনক অপরাধীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
ট্রাম্পবিরোধী এই প্রতিবাদের নাম ‘নো কিংস’ দেওয়া হয়েছে এই কারণে যে সমালোচকরা বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি তার ক্ষমতার বাইরে পা দিচ্ছেন।
শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে সামরিক প্যারেডে কয়েক হাজার উর্দি পরা সেনা অংশ নিয়েছে। তারা কুচকাওয়াজ করে যাওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাঁড়িয়ে সালাম গ্রহণ করেন। সেনাদের পাশাপাশি প্যারেডে সামরিক ব্যান্ড, কয়েক ডজন ট্যাংক ও সামরিক যানও অংশ নেয়।
ট্রাম্প সংক্ষিপ্ত ভাষণে প্যারেডে অংশ নেওয়া সেনাদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের সেনারা কখনো হাল ছাড়ে না। কখনো আত্মসমর্পণ করে না এবং কখনোই, কোনো সময়ই পালিয়ে যায় না। তারা লড়াই, লড়াই, লড়াই করে আর জিতে, জিতে, জিতে।”
কিছু রাজনীতিক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এই প্যারেডকে ব্যয়বহুল অসার প্রকল্প আখ্যায়িত করে এর সমালোচনা করেছেন। মার্কিন সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এই প্যারেডের আয়োজন করতে আড়াই কোটি থেকে সাড়ে চার কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে।
কিন্তু সেখানে উপস্থিত অনেকেই এই আয়োজনের পক্ষে কথা বলেছেন। সাবেক সেনা মেলভিন গ্রেভস যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেন তারা কোনো কুচকাওয়াজ পাননি বলে জানান। তাই এবারের প্যারেড উদযাপন করেছেন তিনি।
১৯৯১ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচডব্লিউ বুশের সময় শেষবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় ওই প্যারেডের মাধ্যমে উপসাগরীয় যুদ্ধ জয় উদযাপন করেছিল মার্কিন বাহিনী।