শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক, হাজির না হলে অনুপস্থিতিতেই বিচার

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়েছে। হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান প্রসিকিউটর।

সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির জন্য পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি এবং তারা ভারতে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে জানান, আসামিদের গ্রেফতারে সম্ভাব্য সকল স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু তাদেরকে পাওয়া যায়নি। পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। আসাদুজ্জামান খানকেও তার বাসা ও অন্যান্য স্থানে খোঁজা হয়েছে কিন্তু পাওয়া যায়নি। ছয় আগস্ট থেকে তিনি অজ্ঞাতস্থানে পলাতক বলে জানানো হয়।

গণমাধ্যমের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে প্রসিকিউটর বলেন, দুই অক্টোবর আসাদুজ্জামান খান ভারতে পালিয়ে গেছেন। এদিন ট্রাইব্যুনালে গ্রেফতার দেখানো একমাত্র আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে হাজির করা হয়।

শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল জাতীয় দুইটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। সাত দিনের মধ্যে যদি আসামিরা আদালতে হাজির না হন, তাহলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হবে।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও যদি তারা আদালতে উপস্থিত না হন, তাহলে আদালত তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্যক্রম শুরু করবেন।”

এর আগে ভোরে ট্রাইব্যুনালের শিশু একাডেমি সংলগ্ন ফটকের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ আরেকটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে “মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

পহেলা জুন প্রসিকিউশন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে এবং পরে তা আমলে নিয়ে তার ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। একইসাথে গ্রেফতারকৃত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনে ১৪০০ জন নিহত ও ২৫ হাজার আহত হওয়ার দায় শেখ হাসিনার ওপর আরোপ করা হয়েছে। নিহতদের তালিকা ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়েছে।

মোট ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট, অডিও-ভিডিও ও সংবাদ প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। এ মামলায় ৮১ জন সাক্ষী উপস্থাপন করা হবে।

প্রসিকিউশনের দাবি, শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হত্যাকাণ্ড চালায় এবং মরনঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “এই বিচার শুধু অতীতের প্রতিশোধ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতিজ্ঞা।”

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান জামায়াতপন্থী আইনজীবী তাজুল ইসলাম। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই দায়ের হয় প্রথম মামলা।

এই মামলার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা রয়েছে— একটি গুম-খুনের অভিযোগে, অপরটি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে।