কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ‘চুরির বিচারের প্রতিশোধ নিতে’ এক সালিসকারীর ছেলেকে ডেকে নিয়ে বিষ মিশ্রিত তরল খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
কয়েক দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর কুমিল্লা সদর হাসপাতালে কিশোরটি মারা যায় বলে জানান কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী।
নিহত হোসাইন (১২) বুড়িচং উপজেলার শিকারপুর গ্রামের আবু তাহের ও শাহিনা আক্তারের ছেলে। সে শিকারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
ঘটনার পর ১২ জুন বুড়িচং থানায় হোসাইনের মা শাহিনা আক্তার একটি মামলা করেন। মামলায় শিকারপুর গ্রামের মো. সোলাইমানের দুই ছেলেকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের একজন আলাউদ্দিন, অন্যজন ১৬ বছর বয়সী কিশোর।
নিহত হোসাইনের বাবা আবু তাহের জানান, সম্প্রতি শিকারপুরের মইনুল হোসেনের মুদি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে সোলাইমানের কিশোর ছেলেকে সন্দেহ করেন মইনুল। এ ঘটনায় এক গ্রাম্য সালিস হয়, যেখানে তিনিসহ আরও চারজন সালিসকারীর সঙ্গে জরিমানা নির্ধারণ করা হয় পাঁচ হাজার টাকা।
আবু তাহের অভিযোগ করেন, “এই সালিসের প্রতিশোধ নিতে ৩১ মে সোলাইমানের দুই ছেলে হোসাইনকে তাদের বাড়িতে ডেকে নেয়। সেখানে তার হাত-পা বেঁধে মারধর করা হয় এবং জোর করে বিষপান করিয়ে অণ্ডকোষে এসিড ঢেলে দেওয়া হয়।”
পরে হোসাইনকে প্রথমে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, এরপর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং এক পর্যায়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার হোসাইন মারা যায়।
হোসাইনের মা শাহিনা আক্তার বলেন, “আমার ছেলে ১২ দিন ধরে আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছে। চুরির বিচার করতে গিয়ে আজ আমি আমার নিষ্পাপ ছেলেকে হারিয়েছি। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।”
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক অরূপ কুমার রায় বলেন, “বিষক্রিয়ায় ছেলেটির গলা ফুলে গিয়েছিল এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। অণ্ডকোষ সম্পূর্ণ ঝলসে গিয়েছিল। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্টেই নিশ্চিত হওয়া যাবে ঠিক কী ধরনের বিষ বা রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছিল।”
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, নিহত হোসাইনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।