উত্তরায় ‘নগদ’ পরিবেশকের টাকা লুট: সাবেক সেনা ও পুলিশ সদস্যসহ গ্রেপ্তার ৫

ঢাকার উত্তরা এলাকায় ‘নগদ’ পরিবেশকের ১ কোটি ৮ লাখ ১১ হাজার টাকা লুটের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন সাবেক সেনা সদস্য এবং একজন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

ঘটনার চার দিনের মধ্যেই ‘চাঞ্চল্যকর’ এই ডাকাতির ‘রহস্য উদঘাটনের’ দাবি করেছে পুলিশ। জানানো হয়, এ পর্যন্ত ৩২ লাখ ১০ হাজার ৭৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধার এবং জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন— মো. হাসান (৩৫), গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন (৫০), শেখ মো. জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল (৪৩), মো. ইমদাদুল শরীফ (২৮) এবং মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপন (২৭)।

চক্রের মূলহোতা শাহিন পুলিশের চাকরিচ্যুত কনস্টেবল। তার বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ একাধিক মামলা রয়েছে, এবং এর আগে তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। জালাল উদ্দিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট হলেও নিজেকে ‘ক্যাপ্টেন’ পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।

বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. মুহিদুল ইসলাম জানান, নগদের সংশ্লিষ্ট কাউকে এ ঘটনায় জড়িত পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, “অনেক সোর্স অনেক সময় কাজ করে। নগদের কোনো লোক এটা করেনি বলা যাবে না, তবে এখন পর্যন্ত বৈধ প্রমাণ হাতে আসেনি। গ্রেপ্তাররাও কেউ বলেননি তাদের (নগদ) অফিসের কোনো লোক এর সাথে জড়িত।”

১৪ জুন সকালে নগদ পরিবেশক আব্দুল খালেক নয়নের বাসা (উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর, ১২ নম্বর রোড, ৩৭ নম্বর বাড়ি) থেকে প্রতিষ্ঠানটির চারজন কর্মচারী চারটি ব্যাগে ১ কোটি ৮ লাখ ১১ হাজার টাকা নিয়ে নগদের কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন।

দুটি মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় একটি কালো রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে ‘র‌্যাব’ লেখা কালো কটি পরা, মুখে কাপড় বাঁধা, অস্ত্রধারী কয়েকজন ব্যক্তি নেমে এসে টাকার ব্যাগসহ তিন কর্মচারীকে ধরে ফেলে।

ডাকাতরা তাদের তুরাগ থানাধীন ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন এলাকায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর আব্দুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করা হয়।

তদন্তে খিলগাঁও এলাকা থেকে মাইক্রোবাসের চালক হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি নকল নেমপ্লেট ও নগদ ৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার হয়। পরে মাদারটেক থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়।

উপকমিশনার মুহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা নয়নসহ টাকা পরিবহনে থাকা চারজনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। গাড়ির নম্বর শনাক্ত করে তার মালিককে বের করি এবং তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চালক হাসানকে গ্রেপ্তার করি। প্রথমে সে ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে, যার মধ্যে সাড়ে ৪১ হাজার টাকা সে ইতোমধ্যে খরচ করেছে।”

এরপর মূলহোতা শাহিনকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আদাবর থেকে ইমদাদুলকে ৮ লাখ ৪ হাজার ৭৮০ টাকাসহ ও সবুজবাগ থেকে জালালকে ৬৩ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

জালাল নিজেকে ক্যাপ্টেন পরিচয় দিয়ে আসছিলেন এবং ঘটনার পরদিন লুটের ১২ লাখ টাকা নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেন বলে স্বীকার করেন।

সবশেষে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকা থেকে শিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে র‌্যাব ও পুলিশের নকল আইডি কার্ড, লাঠি, সিগনাল লাইট, সেনাবাহিনীর লোগো সম্বলিত মানিব্যাগ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এই মামলার রহস্য উদঘাটনকে নিজেদের ‘বড় সফলতা’ হিসেবে অভিহিত করে উপকমিশনার মুহিদুল ইসলাম বলেন, “মামলাটি তদন্তাধীন, আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।”

তিনি আরও বলেন, “পুলিশের কোনো দুর্বলতা নেই। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, আমরা লক্ষ্য করেছি। যে কোনো ঘটনার রহস্য উদঘাটনের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তবে জনগণকেও সচেতন হতে হবে।”

পাঁচ আসামির ছয় দিনের রিমান্ড
ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত গ্রেপ্তার পাঁচজনের ছয় দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই সুমন মিয়া আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, সাবেক পুলিশ সদস্য ও সেনাসদস্য এই ডাকাত দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম জশীতা ইসলাম ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই আতিকুল ইসলাম রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।