যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি হয়েছে। সোমবার দেওয়া তার এ ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্যের দুই শত্রু দেশের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা যুদ্ধ শেষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনটি হলে ওই অঞ্চলে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আপাতত কমে আসবে।
তবে ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরও ইসরায়েল তা নিশ্চিত করেনি।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবারের প্রথম দিকেই তারা ইরান থেকে ছোড়া কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানায়, হুমকি প্রতিরোধে তাদের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাগুলো সক্রিয় রয়েছে।
এর আগে এক ইরানি কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, তেহরান অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে ইরানও শত্রুতা বন্ধ করবে না।
ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, “যেমনটি হওয়া উচিত সবকিছু তেমনটিই হচ্ছে ধরে নিচ্ছি… ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বন্ধ করার জন্য মনোবল, সাহস ও বুদ্ধিমত্তা থাকার জন্য ইসরায়েল ও ইরান, উভয় দেশকে অভিনন্দন জানাই।”
শুক্রবার ইরানে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও যোগ দেয় এবং দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানে। তেলআবিব ও ওয়াশিংটন দাবি করেছে, ইরান একটি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোররাত ৪টা থেকে ইসরায়েল যদি তাদের ‘বেআইনি আগ্রাসন’ বন্ধ করে, তাহলে ইরানও পাল্টা হামলা চালাবে না।
এই সময়ের পর থেকে ইরানে ইসরায়েলি হামলার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে আরাগচি জানান, সামরিক অভিযান অবসানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে।
হোয়াইট হাউজের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলে অস্ত্রবিরতির বিষয়টি চূড়ান্ত করেন। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরান আর হামলা না চালালে এই অস্ত্রবিরতিতে সম্মত থাকবে।
ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, দুই দেশ চলমান অভিযান শেষ করার জন্য কিছুটা সময় নেবে এবং এরপর পর্যায়ক্রমে অস্ত্রবিরতি শুরু হবে।
ইরান সবসময় পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কথা অস্বীকার করেছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, “ইরান যদি চায় তাহলে বিশ্ব নেতারা আমাদের থামাতে পারবে না।”
ইসরায়েল এখনো আন্তর্জাতিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি এবং মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ হিসেবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে ধারণা করা হয়, যদিও তারা কখনো তা স্বীকার বা অস্বীকার করেনি।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি এক ফোন কলে ইরানি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অস্ত্রবিরতির বিষয়ে সম্মতি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইরানিদের সঙ্গে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি মিশন এবং ওয়াশিংটনের ইসরায়েলি দূতাবাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এর আগেই তিনজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ইসরায়েল শিগগিরই ইরানে তাদের অভিযান শেষ করতে চাইছে এবং এই বার্তাটি যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠানো হয়েছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, নেতানিয়াহু সোমবার মধ্যরাতে মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন, যা মঙ্গলবারের প্রথমদিকে শেষ হয়। বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রীদের চুপ থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
তবে ওই অঞ্চল এখনও পুরোপুরি শান্ত হয়নি।
সোমবার রাত ও মঙ্গলবার প্রথমদিকেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তেহরানের বাসিন্দাদের দুটি এলাকা ছেড়ে যেতে সতর্ক করে।
মঙ্গলবার সকালেই গোলান মালভূমির দক্ষিণে শত্রু আকাশযান প্রবেশের আশঙ্কায় সতর্কতা সংকেত বাজানো হয়।
এর আগে সোমবার ট্রাম্প কাতারের মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ইরানের হামলার বিষয়টি উড়িয়ে দেন এবং আগাম সতর্কতা দেওয়ায় তেহরানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ইরান ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল, যেগুলো খুব কার্যকরভাবে প্রতিহত করা হয়।
তিনি ইরানের এই হামলাকে ‘অত্যন্ত দুর্বল প্রতিক্রিয়া’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “আমরা এটি প্রত্যাশা করছিলাম।”
এর আগেও ইরান সীমিত পাল্টা হামলা চালিয়ে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং এমন কোনো যুদ্ধ শুরু করেনি যা তারা সামাল দিতে পারবে না।
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে সীমিত হামলা চালিয়ে এবারও তেহরান একই কৌশল অবলম্বন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।