বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পুনর্গঠনে আগ্রহী নয়াদিল্লির সংসদীয় কমিটি

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্যরা ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
শনিবার প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, শীর্ষস্থানীয় চার বিশেষজ্ঞ ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্যদের মধ্যে একটি ‘বিশেষ মতবিনিময় সভা’ হয়েছে। ওই সভায় এমপিরা ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এর আগে প্রকাশিত আরেক খবরে বলা হয়, শুক্রবার বিকালে ওই সভায় সংসদীয় কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত এমপি শশী থারুর। সেখানে ঢাকা-দিল্লির বর্তমান সম্পর্ক এবং ভারত কীভাবে তার অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত চার বিশেষজ্ঞ হলেন— সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন ও জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অমিতাভ মাত্তু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির বরাতে খবরে বলা হয়, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বিষয়গুলো নিয়ে এমপিরা নিজেদের গভীর উপলব্ধি প্রকাশ করেছেন। তাদের সবার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মেরামত করে সামনে এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহ দেখা গেছে।”
প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সভাটি চলে। সেখানে সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক কীভাবে মেরামত করা যেতে পারে, সে বিষয়ে পরামর্শ শুনতে চান।

আরেক ব্যক্তির বরাতে খবরে বলা হয়, “সেখানে এমন একটা বোঝাপড়া ছিল যে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি অভিন্ন সংস্কৃতি রয়েছে; ফলে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশকে বৈরী প্রতিবেশী হিসেবে দেখা উচিত নয়।”
এমপিরা এমন মতও দেন যে, ভারত সরকারের উচিত পশ্চিমবঙ্গকে সম্পৃক্ত করে এক ধরনের সাংস্কৃতিক কূটনীতি চালু করা, যেন দুই দেশের মধ্যকার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় কিছুটা প্রশমিত হয়।
সোমবার কলকাতায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশও এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে খবরে বলা হয়।

স্থায়ী কমিটির আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ অভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতিতে যুক্ত। এ গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ কাজে লাগিয়ে নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে এক ধরনের ‘প্যারা ডিপ্লোমেসি’ সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত।”
এমপিরা বৈঠকে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব, বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ এবং ১৯ জুন চীনের কুনমিংয়ে ঢাকা, ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র দপ্তরের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
২০২৪ সালের অগাস্টে আওয়ামী লীগে নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেই ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটতে থাকে।
কূটনীতিতে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পাশাপাশি পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা আসে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেও।
সবশেষ শুক্রবার স্থলপথে বাংলাদেশের পাটপণ্য ও বোনা কাপড় আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত।
এর আগে ১৭ মে তারা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের আমদানির ক্ষেত্রেও একইরকম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।
তার আগে ৯ এপ্রিল মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেওয়া হয়।