জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। সোমবার সকালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্সের লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সামনের জায়গায় এক্সকাভেটর দিয়ে গাছ উপড়ে ফেলার কাজ শুরু করে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাছ উপড়ানোর সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভবন নির্মাণের সমর্থনে থাকা গণিত বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। গাছ কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক জোটের নেতা–কর্মীরা এবং তীব্র প্রতিবাদ জানান।
দুপুরের দিকে উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) নাসির উদ্দীনসহ কয়েকজন শিক্ষক ঘটনাস্থলে পৌঁছান। শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসার জবাবে তাঁরা জানান, গাছ কাটার অনুমতির বিষয়ে তাঁরা অবগত ছিলেন না। পরে উপাচার্যের নির্দেশে গাছ উপড়ে ফেলার কাজ বন্ধ করা হয়। তবে এর আগেই অর্ধশতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়, যার মধ্যে অধিকাংশই সেগুন ও কিছু কাঁঠালগাছ ছিল।
উপাচার্য বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের টেন্ডার যারা পাবে, তাদের পরামর্শে জায়গা নির্ধারণ করে ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবন দরকার, আবার পরিবেশও রক্ষা করতে হবে। আমাকে না জানিয়ে গাছ কাটা হয়েছে, বিষয়টি আজ প্রশাসনিক সভায় আলোচনা করব।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এর আগে গত ২০ এপ্রিল একই জায়গায় ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে টিনের বেড়া দিয়ে গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থীদের বাধায় তখন কাজ বন্ধ হয়। উপাচার্য তখন আশ্বাস দিয়েছিলেন, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া কোনো ভবন নির্মাণ হবে না। কিন্তু তার আগেই গাছ কেটে ভবন নির্মাণ শুরু হলো।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ বলেন, “গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থী আমাকে ফোন করে জানান, সব ঝামেলা মিটে গেছে। সে অনুযায়ী কাজ শুরু করি। শিক্ষক বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাজ শুরু করা আমাদের ভুল হয়েছে।”
অন্যদিকে গণিত ছাত্র সংসদের ভিপি আবু রুম্মান বলেন, “আমরা গাছ কাটার পক্ষে নই। কিন্তু আমাদের ভবনের প্রয়োজন রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, শিক্ষকদের বসার জায়গার অভাব রয়েছে। একাডেমিক কার্যক্রম সচল রাখতে ভবন দরকার।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১,৪৪৫ কোটি টাকায় ১২টি স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ১০ তলাবিশিষ্ট ছয়টি নতুন হল নির্মাণ শেষ হয়েছে। এসব ভবনের নির্মাণে কয়েক হাজার গাছ কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বারবার প্রতিবাদ জানিয়েও ফল পাননি শিক্ষার্থীরা।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সজীব আহমেদ বলেন, “মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নাধীন থাকা অবস্থায় গাছ কাটা বেআইনি। পিডি জানেন না, উপাচার্য জানেন না—তাহলে গাছ কেটেছে কে? আমরা চাই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক, না হলে আইনি পথে যাব।”