ফেব্রুয়ারিতে ভোটের আশা নয়, সুনির্দিষ্ট তারিখ চান বিএনপি: দুদু

অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আশা দিলেও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
সংস্কার ও বিচারের নানা প্রসঙ্গ সামনে এনে একটি মহল ‘নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করছে’ বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী নবীন দলের প্রতিবাদ সভায় দুদু বলেন, “কায়দা কৌশল করে, সংস্কারের নামে, বিচারের নামে আরও কী কী সব বিষয় সামনে এনে নির্বাচনটা কীভাবে ঠেকানো যায় সেই বিবেচনা সামনে এনেছে।

“পাগলও বোঝে কারা আগামী দিন ক্ষমতায় যাবে। কিন্তু কিছু কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, তথাকথিত রাজনীতিবিদ, তথাকথিত বিশেষ মহল মনে করে তারা ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি এই প্রথম ক্ষমতায় যাবে এটা না। এর আগেও একাধিকবার বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতায় গেছে।”

স্বৈরতন্ত্র যেন আর বাংলাদেশে ফিরে না আসে, সেজন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই একমাত্র পথ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “লন্ডনে আমাদের নেতা তারেক রহমানের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর আশার অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। সেই অবস্থাটা এখন ধরে রাখতে হবে।

“আমি সরকারকে অনুরোধ করব, যত দ্রুত সম্ভব ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম হোক, মাঝখানে হোক, একটি দিন ঘোষণা করতে হবে, একটি তারিখ ঘোষণা করতে হবে। তাহলে এখন যে অস্থিরতা-সংকট, আমরা মনে করি অনেকাংশে সেটা কমে যাবে।”

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে দুদু বলেন, “ষড়যন্ত্রকারী … পার্শ্ববর্তী দেশে বসে বসে ষড়যন্ত্রের স্বপ্ন দেখায় … যে কোনো সময় ফুস করে ঢুকে পড়বে।”

তবে তিনি আরও বলেন, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না।
“আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগকে হত্যা করেছে, খুন করেছে, সেই হত্যাকারী হচ্ছেন শেখ হাসিনা।”

২০১১ সালের ৬ জুলাই তৎকালীন বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিনসহ বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ও বিপ্লব কুমার সরকারের বিচারের দাবিতে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।

‘নির্বাচনে ঠিক হবে কারা শক্তিশালী’

দুদু বলেন, “এখন অনেকেই বিএনপিকে আমলেই নিতে চাচ্ছে না। নির্বাচন হলে নাকি বোঝা যাবে কোন দল কতটা শক্তিশালী। আমরাও তাই মনে করি। আমরা মনে করি, নির্বাচনটা খুব জরুরি।

“নির্বাচন হলে কারা দুইটা-তিনটা সিট পাবে অথবা জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, দেশ ছাড়া হবে, এটা নির্বাচন ছাড়া তো বোঝা যাবে না। আমরা মনে করি, জয়নুল আবদিন ফারুকসহ বিএনপির ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, আগামী দিনে তার প্রতিশোধ নেব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। বিএনপির বিজয়ের মধ্য দিয়ে, বিএনপির সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে।”

‘মুরুব্বিদের মত কথাবার্তা বেমানান’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “আমরা শান্তির পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, বহুদলীয় মতকে সম্মান জানানোর পক্ষে। আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে ঠিক তার উল্টো। তারা সংসদকে অপবিত্র করার পক্ষে, বিরোধী দলকে নির্বংশ করার পক্ষে এবং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য গণহত্যাসহ যা খুশি তা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে।

“আজকে এই পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মাঝখান থেকে যারা উত্থানের জন্য চেষ্টা করছেন, তাদেরকে বলব, ছোটবেলায় আমরাও আদর্শ লিপিতে পড়েছি, ‘ওই দেখা যায় তাল গাছ ওই আমাদের গাঁ, ওইখানেতে বাস করে কানা বকের ছাঁ।’ কানা বকের ছাঁ থেকে আস্তে আস্তে বড় বক তৈরি হয়। হঠাৎ করে হয় না। আমার সন্তান কিংবা আমার সন্তানের পরবর্তী প্রজন্ম যদি এখনই মুরুব্বিদের কথামত কথা বলেন, এটা বেমানান।”

তিনি আরও বলেন, “দয়া করে একটু সংযত হোন। গণতন্ত্রের স্বার্থে, সর্বদলীয় মতামতকে গ্রাহ্য করার স্বার্থে এবং জাতীয় একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে আমরা যখন যাচ্ছি, সেটাকে দয়া করে কেউ বাধাগ্রস্ত করবেন না।

“তাহলেই এই ২০১১ এর ৬ জুলাই জাতীয় সংসদ ও জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর যে হামলা হয়েছে, সেই হামলার ভালো প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে সেদিন, যেদিন বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রকে সমুন্নত রেখে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং প্রিয় নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হবে।”

জাতীয়তাবাদী নবীন দলের সভাপতি হুমায়ুন আহমেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানার সঞ্চালনায় সভায় বিএনপির মাহবুবুর রহমান হারেস, ইসহাক আলী সরকার এবং শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের জাকির হোসেন বক্তব্য দেন।