পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় পুলিশ বাহিনীর সংস্কার ও ভাবমূর্তি উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
সভায় সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা বলেন, “১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজনীতিবিদরা সবকিছু পরিবর্তন করলেও পেনাল কোড, সিআরপিসি ও অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট পরিবর্তন করেননি, যেগুলো সময়ের দাবি ছিল।” তিনি মন্তব্য করেন, ১৯৭১ সালের পরেও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি ছিল। পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংস্কার কমিশনের যে প্রতিবেদন, সরি টু সে, আমি সাত দিনে করে দিতে পারতাম।”
১৫ জানুয়ারি সফর রাজ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি ৩৫২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে ১৪টি সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে পুলিশের নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে পৃথক পুলিশ কমিশন গঠনের পাশাপাশি বলপ্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদে আমূল পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়। ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন এবং র্যাবের প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়নের কথাও বলা হয়।
প্রতিবেদন নিয়ে সমালোচনা করে নূরুল হুদা বলেন, “কমিশন আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলছে। যখন নিরীক্ষার কথা ওঠে তখন ভয় হয়। সবই যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার হয়, তাহলে কমিশনের প্রয়োজন কী? কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের কিছু বলেনি, যা এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়।” তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বাস্তব পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম এবং মুখ্য আলোচক ছিলেন লেখক ও চিন্তক সলিমুল্লাহ খান।
পুলিশে ঘুষ-দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে নূরুল হুদা বলেন, “এখন অফিসারদের ভালো পরামর্শ দিতে গিয়ে দেখা যায় তিন-চার বছরে বাড়ি বানিয়ে ফেলতে পারে। হিউজ দুর্নীতি হয়েছে, এখনও যে হচ্ছে না তার গ্যারান্টি নেই।”
সলিমুল্লাহ খান বলেন, “পুলিশকে জনগণের বিপক্ষে দাঁড় করানো যাবে না। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রেই পুলিশ আছে। আমাদের দেশে পুলিশের জনপ্রিয়তা কমেছে, তা উদারচিত্তে আলোচনা হওয়া উচিত।”
সভায় অংশ নিয়ে নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, “রাষ্ট্র যখন নিপীড়ক হয়ে ওঠে, তখন পুলিশ জনতার পুলিশ হতে পারে না। পুলিশের বুদ্ধিমত্তা থাকতে হবে ন্যায় বা অন্যায় বিচার করার।”
ব্যবসায়ী সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর পুলিশের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরির পরামর্শ দেন। সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম বলেন, “আমরা সবাই স্বাধীন হতে চাই, কিন্তু স্বাধীনতা ভালো লাগে না। অনেকেই গোলামী করতে চায়, এ দ্বিচারিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ সিদ্দিকী পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, “পুলিশ যদি সত্যের পথে থাকে, তাহলে নতুন বাংলাদেশে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হবে। পুলিশকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।”