জনগণের ‘ভোট ছাড়াই’ নির্বাচন সম্পন্ন করা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের জামিন আবেদন নাকচ করেছে মহানগর দায়রা জজ আদালত।
বুধবার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নার্গিস ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় হাবিবুল আউয়ালের জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী তাপস চন্দ্র দাস। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে দেন বলে নিশ্চিত করেছেন এ আইনজীবী।
এর আগে ঢাকার সিএমএম আদালতেও সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছিল। এরপর জামিন চেয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন তিনি।
গত ২৫ জুন ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠায়। রিমান্ড শেষে ২৯ জুন সাবেক এই সিইসিকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান গত ২২ জুন শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ সংশ্লিষ্ট সময়ের নির্বাচন কমিশনারদের আসামি করা হয়েছে।
পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে মামলায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই তিন নির্বাচনে ‘গায়েবী মামলা, অপহরণ, গুম, খুন ও নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়।’
সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থেকেও তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন এবং সরকারি কর্মচারী হয়েও অবৈধভাবে ভোটে হস্তক্ষেপ করেছেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট সম্পন্ন করা এবং জনগণের ভোট ছাড়া সংসদ সদস্যদের বিজয়ী ঘোষণা করা—এসব কর্মকাণ্ড আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ভোটকেন্দ্র এলাকার ভোটাররা, ভোট দিতে বঞ্চিত ভোটাররা, দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, সৎ প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারসহ স্থানীয় জনগণ এ ঘটনার সাক্ষী। এছাড়া ব্যালট পেপারের সিল ও স্বাক্ষর জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত ভোট প্রদান সংক্রান্ত সত্য উদঘাটিত হবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার বুধবার মামলায় দণ্ডবিধির ১২০(ক), ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় অভিযোগ যুক্ত করার আবেদন করেন।
ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মিনহাজুর রহমান শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ যুক্ত হয়েছে।