জুলাই অভ্যুত্থানের পরও দুর্নীতি রয়ে গেছে: টিআই চেয়ারম্যান

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরও দেশ থেকে দুর্নীতি পুরোপুরি বিলীন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারম্যান ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ। তিনি বলেন, দুর্নীতি এখনো আছে। তবে এটা বেড়েছে নাকি কমেছে—তা এখনই বলা অনেক তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।

আজ বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইর চেয়ারম্যানের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের দুর্নীতি পরিস্থিতি নিয়ে টিআই চেয়ারম্যানের পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বৈরশাসনের শেষের বছরগুলোতে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। গত বছরের আগস্টে শাসনক্ষমতার পরিবর্তনের পরও দুর্নীতি পুরোপুরি শেষ হয়নি।

বাংলাদেশ সফরের কারণ জানতে চাইলে ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ পরিদর্শনের অংশ হিসেবে তাঁর এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সফরের আগে তিনি মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় গেছেন। এ সফর শুধু প্রতীকী নয়; বরং এর উদ্দেশ্য দুর্নীতিবিরোধী বৈশ্বিক আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানানো।

তিনি আরও বলেন, যেসব দুর্নীতির মামলায় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত, সেসব মামলাকে যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে হবে এবং একটি চূড়ান্ত পরিণতি দিতে হবে। যেসব দেশ তা করতে পেরেছে, তারাই দুর্নীতি ধারণা সূচকে নিজেদের স্কোর উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে।

দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও খুনখারাপির বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “যদি সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের কর্মী ও মানবাধিকারকর্মীরা হয়রানি, হুমকি কিংবা সহিংসতার মধ্যে থাকেন, তবে ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ বা জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।” নাগরিকদের তথ্য জানানো এবং সত্য প্রকাশ করা গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাই সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে।

জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৬০০ কোটি) ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে জানিয়ে টিআই চেয়ারম্যান বলেন, এ অর্থ ফেরাতে সংস্থাটি সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ কোথায় আছে, তা জানা জরুরি। নাগরিক সমাজকে জানতে হবে, অর্থ কোথায় আছে এবং নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোকে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হতে হবে; যাতে সেই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যায়।

সম্প্রতি লন্ডনে ১৮৫ মিলিয়ন (১৮ কোটি ৫০ লাখ) পাউন্ড মূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার উদাহরণ টেনে ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, এটি সম্ভব হয়েছে টিআই বাংলাদেশ, টিআই যুক্তরাজ্য ও স্পটলাইট অন করাপশন (যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাধীন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা)–এর যৌথ উদ্যোগে। এখানে নাগরিক সমাজ তার ভূমিকা রেখেছে এবং ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষও ব্যবস্থা নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় এক ট্রিলিয়ন (লাখ কোটি) ডলার চুরি হয়ে যাচ্ছে। এসব অর্থ প্রতিটি দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও জলবায়ু নীতির জন্য প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে দুর্নীতিবাজ নেতারা বিলাসবহুল বাড়ি–গাড়ি কেনেন জানিয়ে তিনি বলেন, তবে সেটি হিমশৈলীর অংশমাত্র। এ অর্থের বড় অংশ ক্যাপিটাল মার্কেটে চলে যায়, সেখানে মূল্যস্ফীতি বাড়ে ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যে অর্থ জনগণের কাজে লাগার কথা ছিল, তা পরিণত হয় নিরর্থক ব্যক্তিগত সম্পদে।

এদিকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার চেষ্টার পাশাপাশি টাকা পাচার রোধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, যদি বিদেশে অর্থ পাচারের কোনো সুযোগ না থাকে, পাচারকারীরা টাকা পাচার করতে পারবেন না। তাই দেশের বাইরে টাকা পাঠানোর সুযোগ বন্ধ করতে হবে। এ–সংক্রান্ত আইনগুলো আরও শাণিত করতে হবে এবং কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।