বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাতের মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ। আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২৭ আগস্ট আদালত কলিমউল্লাহর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম। এসময় কলিমউল্লাহর পক্ষে তার আইনজীবী মহসিন রেজা জামিন আবেদন করেন। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর দেলোয়ার জাহান রুমি জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কলিমউল্লাহসহ পাঁচ জনকে আসামি করে এ বছর ১৮ জুন মামলাটি দায়ের করে দুদক। অপর আসামিরা হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রকল্প পরিচালক এ কে এম নূর-উন-নবী, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার মো. আ. সালাম বাচ্চু এবং এম এম হাবিবুর রহমান।
৭ আগস্ট মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ওইদিনই জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলায় শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ মিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণে প্রায় ৪ কোটি টাকার অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশ, বিশ্বাসভঙ্গ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বেরোবির উন্নয়ন প্রকল্পে অনুমোদিত ডিপিপি উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন করা হয় এবং ৩০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চুক্তি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই সম্পাদন করা হয়। এছাড়া, ঠিকাদারের চলতি বিল থেকে কাটা নিরাপত্তা জামানত এফডিআর (স্থায়ী আমানত) আকারে ব্যাংকে জমা রেখে, সেই এফডিআরকে লিয়েনে রেখে ঠিকাদারকে ঋণ দিতে ‘না-আপত্তি সনদ’ প্রদান করা হয়—যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারের প্রায় চার কোটি টাকা সরাসরি ঠিকাদারকে দিতে সহযোগিতা করা হয়।
চুক্তিতে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার কোনো বিধান না থাকলেও, ‘আর্থিক সহযোগিতা’ দেখিয়ে ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে অগ্রিম বিল দেওয়া হয়। সেই অগ্রিম বিলের বিপরীতে নেওয়া ব্যাংক গ্যারান্টিগুলো বিল সমন্বয়ের আগেই অবমুক্ত করা হয়। এছাড়া, প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া নকশা ও পরিকল্পনা না মেনে সরকারি ক্রয়বিধির বাইরে গিয়ে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার দরপত্রে অস্বাভাবিক মূল্যদানের (ফ্রন্ট লোডিং) মত বিষয় থাকার পরেও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) ২০০৮ অনুযায়ী যথাযথ মূল্যায়ন না করেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) উপ-উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি পরিচিতি পান।
কলিমউল্লাহকে ২০১৭ সালের ৩১ মে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, তিনি নিয়মিত ক্যাম্পাসে যেতেন না, বরং ঢাকার লিয়াজোঁ অফিস থেকেই দায়িত্ব পালন করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ এর তথ্য অনুযায়ী, দায়িত্বের ১ হাজার ৪৬০ দিনের মধ্যে তিনি ১ হাজার ২২০ দিন অনুপস্থিত ছিলেন।
অনুপস্থিতির পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগও ওঠে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তিনি পুরো মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।