মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত, সহিংসতা ও খাদ্যসংকটের কারণে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) হিসাবে, গত এক বছরে ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, রাখাইনে আরাকান আর্মি ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) মধ্যে চলমান সংঘর্ষের পাশাপাশি খাদ্য ও ওষুধের সংকট বাড়ছে। এসব কারণেই তারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
আরআরআরসির অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ১ মে পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে ১ লাখ ১৮ হাজার নতুন রোহিঙ্গার নিবন্ধন হয়েছে। গত বছরের জুন-জুলাইয়ে অনুপ্রবেশ সবচেয়ে বেশি ছিল। নতুনদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হলেও ঘর বরাদ্দ এখনো হয়নি।
মিয়ানমারের গণমাধ্যম জানায়, আরাকান আর্মি ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর মংডু টাউনশিপ দখলে নিলেও আরসা সেখানে সক্রিয়। গত ২৮ এপ্রিল দুই পক্ষের গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। আরাকান আর্মি সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করছে এবং ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করছে।
টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা বলেন, আরসাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। অনেককে ব্যারাক নির্মাণে বাধ্য করা হচ্ছে এবং খাদ্য কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। পালিয়ে আসার সময় ঘুষ দিতে হচ্ছে মাথাপিছু পাঁচ হাজার কিয়াত।
রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, আরাকান আর্মির নির্যাতন না থামলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে না। বর্তমানে ১৩ লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার নতুন অনুপ্রবেশকারী।
নাফ নদীর ৩৪ কিলোমিটার এলাকায় বিজিবি ও কোস্টগার্ড টহল দিলেও, রাতের বেলায় সীমান্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। নতুন অনুপ্রবেশ বেশি হচ্ছে ২২টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে। অনেকে গোপনে লোকজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন, আবার কেউ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছেন।
গত শনিবার ৩৫ রোহিঙ্গাকে পতেঙ্গা সৈকতের মুসলিমাবাদ বেড়িবাঁধ থেকে আটক করে র্যাব। বিজিবি জানিয়েছে, গত চার মাসে সীমান্তে দৃশ্যমান অনুপ্রবেশ হয়নি, তবে রাতে দুর্গম এলাকা দিয়ে কিছু অনুপ্রবেশ ঘটছে। সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।