বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তীব্র বাণিজ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রের ওপর তিনি ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
ট্রাম্প বলেন, আমেরিকার চলচ্চিত্র শিল্প খুব দ্রুত মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে এবং এজন্য অন্যান্য দেশগুলোর ‘সমন্বিত প্রচেষ্টা’কে দায়ী করেন। এসব দেশ তাদের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রণোদনা দেয়, যা তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেন।
ট্রুথ সোশাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লেখেন, “সবকিছুর উপরে এটা একটা প্রচারণা ও প্রপাগান্ডা! আমেরিকায় তৈরি চলচ্চিত্র আমরা আবার চাই।”
হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে যাচ্ছেন। তার মতে, এসব শুল্ক মার্কিন উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান রক্ষা করবে। তবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এই নীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য উত্তেজনা বেড়েছে।
অভিষেকের আগেই ট্রাম্প তিন হলিউড তারকা—জন ভোইট, মেল গিবসন এবং সিলভেস্টার স্ট্যালোনকে বিশেষ দূত নিযুক্ত করেন। তাদের কাজ হলো হলিউডের ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা প্রচার করা। ট্রাম্প হলিউডকে ‘দুর্দান্ত কিন্তু অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত স্থান’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি লেখেন, “তারা আমার বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে; তাদের কাজ হচ্ছে বিদেশিদের হাত থেকে গত চার বছরে হলিউডের হারানো ব্যবসা ফিরিয়ে আনা—আরও বড়, আরও ভালো এবং আগের চেয়েও শক্তিশালী রূপে!”
মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, “আমরা কাজে লেগে গেছি।”
চলচ্চিত্র শিল্প বিশ্লেষক সংস্থা প্রডপ্রো’র তথ্যে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয় এই খাতে। গত বছর দেশটিতে চলচ্চিত্র খাতে ব্যয় হয়েছে ১৪.৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ কম। একই সময়ে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ বেড়েছে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির প্রভাব ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র খাতেও পড়তে শুরু করেছে। চীন গত এপ্রিলেই জানায়, তারা আমেরিকান চলচ্চিত্র আমদানির কোটা কমাবে।
চায়না ফিল্ম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত চীনা দর্শকদের আগ্রহ কমাবে। তারা বাজারের নিয়ম মেনে চলবে এবং আমেরিকান চলচ্চিত্র আমদানির সংখ্যা সীমিত রাখবে।
চীনের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক নীতি সবচেয়ে কঠোর। কিছু পণ্যে তিনি ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন। এই হার বিদ্যমান শুল্কসহ ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে তার প্রশাসন। জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসিয়েছে।
এই শুল্ক কার্যকর না করে জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রেখেছেন ট্রাম্প, তবে চীনের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।
রোববার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প জানান, তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বৈঠক করছেন। যদিও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, চলতি সপ্তাহেই কোনো বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা আসতে পারে। তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
তিনি আরও বলেন, “একপর্যায়ে আমি এগুলো কমিয়ে দেব, কারণ তা না হলে আপনি কখনোই তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবেন না, আর তারা ব্যবসা করতে চায়।”
rrn0ar