দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে পশু-পাখি, বন্যপ্রাণী এবং সামগ্রিকভাবে বাস্তুতন্ত্রের অধিকারও নিশ্চিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের সঙ্গে মানুষের অধিকারের সম্পর্কটা যেমন, বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে পশুপাখি এবং বন্য প্রাণীর অধিকারের সম্পর্কটা তেমন। রাষ্ট্র রাজনীতিতে গণতন্ত্র এবং শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত থাকলে বাস্তবিকভাবেই বাস্ততন্ত্র নিরাপদ থাকে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে একজন মানুষ একজন নাগরিক হিসেবে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার হারানোর কারণে আমাদের অনেকের মনে হয়তো এক ধরনের অসহিষ্ণুতার জন্ম নিয়েছে। এই অসহিষ্ণুতা কাটিয়ে একজন মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার জন্য মনুষত্ব অর্জন আর পশুত্ব বর্জনই হোক আমাদের অঙ্গীকার। মানুষ হিসাবে আমরা রাষ্ট্র এবং সমাজে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে, অন্য সকল প্রাণীর অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারেও আমরা আরো সতর্ক ও যত্নবান থাকব।’’
দিনব্যাপী ‘প্রাণী ও প্রাণের মেলা’-এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’। মেলায় সৌখিন প্রাণীপ্রেমীরা তাদের পোষা পাখি-পশু নিয়ে আসেন। ‘দেশ হোক সকল প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল’ স্লোগানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রাণীপ্রেমী শাহিনা খান জামান ও সদ্য প্রয়াত স্কুল শিক্ষক আকাশ কলি দাসকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, দেশে প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯, বন্য প্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, জীব বৈচিত্র্য রক্ষা আইন, পরিবেশ উন্নয়ন আইন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইনসহ অনেকগুলো আইন রয়েছে। ‘‘ইনশাআল্লাহ জনগণের রায় বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পশুপাখি, বন্যপ্রাণী তথা বাস্তুতন্ত্রের নিরাপত্তার জন্য এই আইনগুলোকে আমরা সময়োপযোগী করব। এই আইনের অনেকগুলো পরিবর্তন প্রয়োজন আছে, সেগুলোকে ইনশাআল্লাহ আমরা করব।’’
জীব বৈচিত্র্যের হুমকির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘যতটুকু জেনেছি, প্রায় ৩৯০টি প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে চলে গিয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের আরো অনেক দেশেই মানুষের সৃষ্টি পরিস্থিতির কারণে অনেক প্রজাতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘৮০‘র দশকে বাংলাদেশে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫‘শর কাছাকাছি। সর্বশেষ জরিপে সেই সংখ্যা কমে এখন একশ’র কাছাকাছি নেমে এসেছে। হাতির সংখ্যাও এখন কমে ২০০ এর নিচে চলে এসেছে। ঠিক এভাবে বাংলাদেশের আরো অনেক প্রাণী ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছে বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়।’’
এর কারণ হিসেবে তারেক রহমান উল্লেখ করেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, নদী-জলভূমি ভরাট, বন উজাড়, বন্যপ্রাণী পাচারসহ নানা বিষয়। তিনি বলেন, ‘‘এই সকল কারণেই বন্য প্রাণী, জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের আবাসস্থল অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।’’
সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘প্রাণী অধিকারের বিষয়টি শুধু প্রাণীদের প্রতি মানবিক দায়বদ্ধতা নয়, বরং জীব বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ, বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা এবং মানব জাতির সুস্থ ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্যও অপরিহার্য। মানুষ যখন প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করে, তখন তা মানবসমাজের পরিপক্কতা এবং উন্নত নৈতিকতার প্রতিফলন ঘটায়। মানুষের নিজের প্রয়োজনেই প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখা দরকার, প্রাণীদের আবাস অক্ষত রাখা দরকার।’’
তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমরা যখন প্রাণীর নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলছি, তখন হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে—রাষ্ট্র যখন কখনো খোদ মানুষের নিরাপত্তাই নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তখন প্রাণীর নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা কেন? তবে আমাদের এটাও জেনে রাখা দরকার যে, নানা ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা থাকলেও সকল শুভ উদ্যোগকে আমাদের প্রতিদিনের চর্চা ও আলোচনায় রাখতে হবে।’’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক আদনান আজাদ। যৌথ সঞ্চালনায় ছিলেন মুস্তাকিম বিল্লাহ ও লোভা আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কোষাধ্যক্ষ রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, কবি আবদুল হাই শিকদার, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল লতিফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান, চিত্র নায়িকা আইরিন সুলতানা, জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর আতিকুর রহমান মিঠু, প্রাণীপ্রেমী আবু হানিফ, রহিমা আনজুম পুস্প, দিপান্বিতা রিদি, আবুল হাসনাইন মঞ্জুর মোর্শেদ ইমন, অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সমন্বয়ক আতিকুর রহমান রুমন, কেন্দ্রীয় নেতা নিশাত তামান্না জামান ও বাপ্পী খান বক্তব্য রাখেন।
সভায় তারেক রহমানের সহধর্মিনী জুবাইদা রহমানের বড় বোন প্রাণীপ্রেমী শাহিনা খান জামানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শাম্মী আখতার।