সর্বোচ্চ আদালত থেকে শুরু করে দেশের সকল নিম্ন আদালতে আলাদা শরিয়াহ আদালত স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, “দেশের সকল পর্যায়ে আমরা আরেকটি মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছি, তা হলো আলাদা শরিয়াহ আদালত স্থাপন। বর্তমানে আদালতে কিছু বিষয়ে—যেমন মুসলমানদের বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার ও মিরাজ সংক্রান্ত বিষয়ে—শরিয়াহর আলোকে বিচার হয়ে থাকে।
“আমরা বলছি, শরিয়াহ মোতাবেক, শরিয়াহর উপর আস্থা রেখে যদি উভয়পক্ষ বিচার ফয়সালা চায়, সেই সুযোগ সর্বোচ্চ আদালত থেকে সর্বনিম্ন আদালত পর্যন্ত থাকতে হবে। প্রত্যেক স্তরে আলাদা শরিয়াহ আদালত থাকতে হবে এবং সেখানে ইসলামি স্কলার নিয়োগ দিতে হবে। শরিয়াহ আইনে বিচার দ্রুত ফয়সালা হয়, তাই আমরা আলাদা আদালতের দাবি জানিয়েছি।”
ধর্ম ও আল্লাহ-রসুলকে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য বন্ধে আলাদা আইন প্রণয়নের প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে গাজী আতাউর রহমান বলেন, “আমরা বলেছি, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন না করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা যাবে না। যেন-তেন কোনো সংস্কার নয়।
“সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার পর যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে, সেই সরকার প্রথমে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনা করবে, তারপর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি জানান, ঐকমত্য কমিশনের উপস্থাপিত ১৬৬টি প্রস্তাবের বেশিরভাগ বিষয়ে তারা একমত হলেও কিছু জায়গায় মতপার্থক্য রয়েছে। “তারা সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ রাখার প্রস্তাব করেছে। আমরা বলেছি, তা রাখা যাবে না। পরিবর্তে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’—যেটি আগে ছিল, সেটি পুনঃস্থাপন করতে হবে।”
নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নিরপেক্ষ নির্বাচনে ব্যর্থ হলে, নির্বাচন কমিশনের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে ব্যর্থ হলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।”
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে গাজী আতাউর রহমান বলেন, “বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে কার্যকরভাবে স্বাধীন থাকবে। বিচার বিভাগের নিজস্ব সচিবালয় গঠন করে সেখান থেকেই সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।”
জেলা প্রশাসকদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমানে জেলা প্রশাসকদের কাছে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা রয়েছে। আমরা বলেছি, যেহেতু প্রতিটি জেলায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন, তাই জেলা প্রশাসকের কাছে আলাদা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ তারা আগে থেকেই অনেক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। এটি বিচার বিভাগের হাতেই থাকা উচিত।”
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ একীভূত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
কমিশনের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন এবং বদিউল আলম মজুমদার।