নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৯ মে) ভোর পৌনে ৬টার দিকে শহরের দেওভোগ এলাকার নিজ বাসভবন ‘চুনকা কুটির’ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় ছয় ঘণ্টার অভিযানের পর তাকে নেওয়া হয় পুলিশি হেফাজতে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, ডা. আইভীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান জানান, তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ছয়টি মামলা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের একটি দল আইভীর বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু গ্রেপ্তারের সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, দিনের আলো না ফুটে তিনি যাবেন না। বাড়ির ভেতর থেকে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “তাদের (পুলিশ) বলবা আমি দিনের বেলা ছাড়া যাবো না। আমাকে আটক করতে হলে দিনের বেলা আসতে হবে।”
খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ও আইভীর কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা চারদিকের রাস্তা বাঁশ, ঠেলাগাড়ি ও ভ্যানগাড়ি দিয়ে অবরোধ করেন। আশপাশের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে আইভীর বাড়ির সামনে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দেওভোগ ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইভীর সমর্থকরা তার বাড়ির সামনে অবস্থান নেন।
পুলিশের দলটি রাতভর এলাকাবাসী ও কর্মী-সমর্থকদের কারণে একপ্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়ে। রাত ১২টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলেও আইভীর বাড়ির সন্নিকটে যাওয়া সম্ভব হয়নি। রাতভর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আলোচনা চালায়।
পুলিশের ভ্যানে ওঠার আগে সাংবাদিকদের উদ্দেশে আইভী বলেন, “আমি জানি না আমাকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? প্রশাসন বলেছে আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে, কিন্তু আমাকে তা দেখায়নি। আমি ২১ বছর ধরে সকল কিছুর উর্ধ্বে থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে সেবা দিয়েছি। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী হতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমি কি কোনো জুলুমবাজ? আমি কি হত্যা করেছি? চাঁদাবাজি করেছি? কোনো বিরোধী দলকে আঘাত করেছি—এমন কোনো রেকর্ড আছে? তাহলে কেন, কার স্বার্থে, কোন ষড়যন্ত্রে আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো? যারা এখন সরকারে আছেন, তারা তো বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, তাহলে এই বৈষম্য কেন? আমি তো পালাইনি, বাড়িতেই ছিলাম। তাহলে এভাবে গ্রেপ্তার করা হলো কেন? এর জবাব জনগণের কাছেই চাই, ইনশাল্লাহ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”
স্থানীয়দের মতে, সাবেক মেয়র আইভী একজন জনপ্রিয় নেতা। তার গ্রেপ্তারের খবরে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় বলেই তারা প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন। রাত দেড়টা পর্যন্ত দেওভোগ সড়কের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি অবস্থান করে।
শেষ পর্যন্ত ভোরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাড়িতে প্রবেশ করে আইভীকে গ্রেপ্তার করেন।