ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর খুনিদের গ্রেপ্তার নিয়ে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে স্পষ্ট বক্তব্য না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। খুনিদের গ্রেপ্তারে স্পষ্ট বক্তব্য ও সদিচ্ছা দেখা না গেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
শাহরিয়ারের হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতি ও প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ রোববার বিকেলে পৌনে দুই ঘণ্টা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। সেখান থেকে এই হুমকি দেন তাঁরা। অবরোধ কর্মসূচিতে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ এই নির্দলীয় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আজকের দিন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো বক্তব্য আমরা লক্ষ করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর আজকের দিন পর্যন্ত আমাদেরকে আশ্বস্তই করতে পারেননি যে সাম্যর প্রকৃত খুনিদের ধরার জন্য তাঁদের কোনো প্রকার সদিচ্ছা রয়েছে কি না, বা তাঁদের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ রয়েছে কি না।’
এই হত্যাকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মী পারভেজ হত্যার পরও এই সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁদের পরিবারের প্রতি সামান্যতম সহানুভূতিমূলক কোনো বাক্য আমরা শুনিনি।’
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রদলের যেসব নেতা-কর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সামান্যতম সহানুভূতির কোনো বক্তব্য দেননি। সেই পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সামান্যতম সহমর্মিতা তিনি দেখাননি। আমরা তাঁর এ অবস্থানের নিন্দা জানাচ্ছি, ধিক্কার জানাচ্ছি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস অতিবাহিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যদি ছাত্রদল শাহবাগ চত্বর থেকে যমুনায় পদযাত্রা শুরু করে, এই পদযাত্রা রোখার ক্ষমতা কারও নেই। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, যদি এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক এবং সদিচ্ছার অভাব আগামীতে আমরা লক্ষ করি, তাহলে ছাত্রদল যমুনায় যাবে এবং দাবি আদায় করেই বাসায় ফিরবে। আমরা যতক্ষণ চাইব, ততক্ষণ যমুনা অবরোধ করে রাখব।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে অবরোধ কর্মসূচিতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে যমুনাতে একদল আন্দোলন করলে তাদের পানি ছিটিয়ে স্বাগত জানানো হয়, কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশি হামলা করে আন্দোলনকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করা হয়। শাহরিয়ারের প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করার কোনো নমুনা আমরা এখন পর্যন্ত দেখছি না। দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি শাহরিয়ারের প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে দেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদল অবস্থান গ্রহণ করবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার করার প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে আমরা আজকে এখানে ঘোষণা করছি।’
‘শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল ঘাতকসহ সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে’ ছাত্রদল আজ শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছিল। পরে তারা পৌনে দুই ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ করে।
৫ আগস্টের পর বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কর্মী পারভেজ হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন তিনি। অবরোধে কর্মসূচিতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পারভেজ হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়নি। পারভেজ হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন পর শাহরিয়ার আলম সাম্য ক্যাম্পাস–সংলগ্ন এলাকায় নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, ছাত্রদলের কোনো নেতা-কর্মীকে ভবিষ্যতে যদি এ রকম গায়ে আঘাত করা হয়, ছাত্রদলের কোনো নেতা-কর্মী আর বসে থাকবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন নাছির উদ্দীন। শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর মধ্যরাতে শোকবিহ্বল ছাত্রদল নেতা–কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হৃদয়বিদারক আচরণ করেছেন বলেও অভিযোগ তাঁর।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘উপাচার্য এখন পর্যন্ত শাহরিয়ারের হত্যাকাণ্ডকে ধারণ করতে পারেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।’ ৫ আগস্টের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচারপ্রক্রিয়া যদি সুষ্ঠুভাবে হতো, তাহলে শাহরিয়ার আলম সাম্যকে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হতো না।
অভ্যুত্থানের সুবিধাভোগী ও গুপ্ত সংগঠন নিয়ে ক্ষোভ
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী ও ক্রেডিট (কৃতিত্ব) দাবিকারীরা শাহরিয়ারের জানাজায় অংশ নেননি বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শুধু তা-ই নয়, আরও দু-একটি বৃহৎ ছাত্রসংগঠন রয়েছে, যারা প্রোপাগান্ডায় বিশ্বাসী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগান্ডায় জড়িত। তাদের কোনো উপস্থিতিও জানাজায় আমরা লক্ষ করিনি। আমরা নিন্দা জানাচ্ছি, ধিক্কার জানাচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে রাকিবুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি গুপ্ত সংগঠন রয়েছে, শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের নিয়োগ করা বট বাহিনী দ্বারা বিভিন্ন সময় বাজে, নোংরা মন্তব্য করেছে। স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, এ ধরনের নোংরা মানসিকতার মোনাফেক চরিত্রের নেতা-কর্মী যারা লালন করে, তাদের দ্বারা এই বাংলাদেশে কখনো ইসলাম কায়েম হবে না।’
তাদের দিয়ে কখনো এই রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন হয়নি উল্লেখ করে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘তারা সব সময় ষড়যন্ত্রমূলকভাবেই রাজনীতি করে এবং তারা তাদের নিজ পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। নিজ সংগঠনের পরিচয় দিতে লজ্জিত হয় এবং সে কারণে তারা সামাজির যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগান্ডায় (অপপ্রচার) বিশ্বাসী।’
ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমের সঞ্চালনায় অবরোধ কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস এবং সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বক্তব্য দেন। পৌনে দুই ঘণ্টা অবরোধের পর বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা শাহবাগের রাস্তা ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।