মানবতাবিরোধী অপরাধে চার্জশিট হলে নির্বাচনে অযোগ্য হবেন: জামায়াতের প্রস্তাব

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত হলেই নির্বাচনে অযোগ্য হবেন—এমন বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে একমত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি রাষ্ট্র সংস্কারকে আইনিভাবে বৈধতা দেওয়ার জন্য গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ও বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় এবং জনপ্রশাসনের জন্য স্থায়ী কমিশনের প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি।

রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের সংলাপ শেষে এসব তথ্য তুলে ধরেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তাহেরের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সকাল ১০টায় সংলাপে অংশ নেয় এবং সন্ধ্যা ৬টায় তা শেষ হয়।

সংলাপে জামায়াত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। তাহের বলেন, সাধারণ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছরের সাজায় নির্বাচনে অযোগ্যতা হয়। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধ সাধারণ অপরাধ নয়। তাই এই অপরাধে চার্জশিট হলেই নির্বাচনে অযোগ্য হতে হবে। তিনি জানান, জামায়াত শুরুতে সাজা পাওয়ার পর অযোগ্যতা চাইলেও, যুক্তি শুনে তারা চার্জশিট পর্যায়ে অযোগ্যতা মেনে নিয়েছে।

তিনি বলেন, “একটা বিশেষ সময়ে সংঘটিত বিশেষ অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধ। তাই চার্জশিট হলেই নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হতে হবে।”

গণভোট বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা গণভোট চাই। জুলাই সনদ, জাতীয় সনদ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য বিষয়ে জনগণের মত জানতে চাই। গণভোট আইনি, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈধতা দেয়।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিষয়ে জামায়াত দুইটি প্রস্তাব দিয়েছে। একটি হচ্ছে সর্বশেষ বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা। আরেকটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সদস্য থাকবেন।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকার শর্তও প্রস্তাব করেছে জামায়াত। পাশাপাশি বিচারবিভাগীয় সচিবালয় গঠন এবং জনপ্রশাসনের জন্য স্থায়ী কমিশনের প্রস্তাবও দিয়েছে তারা।

নির্বাচনের বিষয়ে তাহের বলেন, “আমরা এখনই নির্বাচন চাই না। সংস্কার শেষ করে প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে নির্বাচন হওয়া উচিত।”

সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, দ্রুততম সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করে জাতীয় সনদ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন। তিনি বলেন, “প্রাথমিক আলোচনা দ্রুত শেষ করে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় মতপার্থক্যগুলো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে।”

কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার সহকারী মনির হায়দার সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, এহসান মাহবুব যোবায়ের, সাইফুল আলম খান মিলন, মতিউর রহমান আকন্দ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, শিশির মোহাম্মদ মনির এবং সরকার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পাঁচটি কমিশনের সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সেই মতামতের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে তারা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *