জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী মো. নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মন্তব্যের পরদিনই, ২০ ফেব্রুয়ারি, তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব শাখায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে কর্মরত নাজমুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রশাসন-২ শাখায় সংযুক্ত করা হয়। তিনি জানান, কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তের আদেশে সই করেন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া। তিনি জানান, এটি অফিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে।
নথিপত্রে দেখা যায়, ১৯ ফেব্রুয়ারি নাজমুল সারজিস আলমের একটি ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করেন। পরদিন তাঁকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আদেশে ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগ আনা হলেও ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করার বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিভাগীয় মামলার অভিযোগনামায় বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
অভিযোগনামায় বলা হয়, সারজিস আলম জুলাই বিপ্লব ও ছাত্র–জনতার অভ্যুথানের অন্যতম সমন্বয়ক। সেখানে উল্লেখ করা হয়, “আপনার উপরোক্ত মন্তব্য বা বক্তব্য জাতীয় ঐক্য চেতনার পরিপন্থি, যা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয়প্রতিপন্ন, জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে মর্মে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ধরনের অবিবেচনাপ্রসূত বক্তব্যে মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়গণদের হেয় করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মচারী হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এ ধরনের মন্তব্য বা বক্তব্য প্রদান সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণের শামিল।”
ফেসবুক পোস্টে নাজমুল মন্তব্য করেছিলেন, “আপনারা স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের সচিব বানানোর জন্য ডিও দেন, আবার বড় বড় কথা বলেন ভাইয়া।”
এই মন্তব্যের ভিত্তিতে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে বলা হয়, কেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা লিখিতভাবে জানাতে হবে এবং ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে আগ্রহ থাকলে তা-ও জানাতে হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শাহ আলম মুকুল জানান, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরণ করে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
লিখিত জবাবে নাজমুল বলেন, সারজিস আলম তাঁর বিরুদ্ধে কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি, অথচ তাঁর পোস্টে মন্তব্য করার জন্য তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যদি মন্তব্যের কারণে সরকার বিব্রত হয়ে থাকে, তাহলে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও সচেতন থাকবেন। তিনি ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নেওয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেন।