বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টিকে ‘ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের পর আপিল বিভাগ জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে বেকসুর খালাস দেওয়ার পর এমন মন্তব্য করেন তিনি।
কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শফিকুর রহমান বলেন, “এই রায়ের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, এটা ছিল ইচ্ছাকৃত নেতৃত্ব গণহত্যা।”
তিনি বলেন, “দায়িত্বশীল নেতা প্রতিদিন জন্মায় না। এটা আল্লাহর দান। একটি দল ও দেশকে নেতৃত্বশূন্য করা মানে জনগণকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া।”
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল ও রিভিউ শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ পাঁচ নেতা এবং বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেয়, যা আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।
সরকার পরিবর্তনের পর আজহারের রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে নতুনভাবে আপিল শুনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মঙ্গলবারের রায়ে আজহারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
শফিকুর রহমান বলেন, “এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সেই সত্যটাই আল্লাহ আজ আমাদের দেখিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “এই মামলা পরিচালনায় আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। সংবিধান, আইন কিছুই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। যাদের ইশারায় আদালত চলেছে, তাদের ইচ্ছাই ছিল রায়।”
তার দাবি, “এই মামলার একটি ব্রিটেনে পরিচালিত হয় এবং সেখানকার উচ্চ আদালত বলেছে, এটি ছিল বিচারের নামে প্রহসন—জাস্ট জেনোসাইড অব দ্য জাস্টিস।”
এ সময় তিনি জামায়াতের প্রয়াত শীর্ষ নেতাদের নাম উল্লেখ করে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন এবং বলেন, “আপনাদের দুনিয়া থেকে সরানো হয়েছে, কিন্তু আমাদের হৃদয় থেকে সরানো যায়নি।”
শফিকুর রহমান আরও বলেন, “জেলে সেজদায় অনেক দোয়া করতাম। আল্লাহ এটিএম আজহারুল ইসলামকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, এখন সত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন।”
তিনি বলেন, জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পাশাপাশি তাদের পরিবারের ওপর ‘অবর্ণনীয় নিপীড়ন’ চালানো হয়েছে।
দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, “আমরা প্রতিশোধ নিইনি, তবে ন্যায়বিচার চাই। এই রায় প্রমাণ করেছে এটি ছিল পরিকল্পিত নেতৃত্ব হত্যাকাণ্ড।”
শফিকুর রহমান বলেন, “এই সংগঠনের দ্বারা যারা কষ্ট পেয়েছেন, তাদের কাছে আমরা বিনাশর্তে ক্ষমা চাই। কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নই।”
গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের বক্তব্যগুলো দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিন। আল্লাহ এই জাতির সহায় হোন।”
তিনি বলেন, “আমরা কথা দিচ্ছি, সুযোগ পেলে ইনশাআল্লাহ প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাব, বৈষম্য দূর করব, কল্যাণধর্মী ও মানবিক সমাজ গড়ব।”
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এটিএম আজহারুল ইসলামের পুত্র তাসনীম আজহার সুমনসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।