তারেক-ইউনূস বৈঠকের প্রতিবাদে ঐকমত্য বৈঠক বর্জন জামায়াতের

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বর্জন করেছে জামায়াতে ইসলামী। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ ঘোষণার প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, মঙ্গলবার সকালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফার সংলাপে তারা অংশ নেননি। সকাল সাড়ে ১১টায় বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মূলতবি বৈঠক শুরু হলেও জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

বৈঠকে বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদের পাশের আসনটি জামায়াতের জন্য নির্ধারিত ছিল, তবে তা খালি ছিল। ওই সারিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির তাসনিম জারা, বিএনপির ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ জানান, “আমরা অন প্রোটেস্ট আজকের বৈঠকে যাইনি।” পরদিনের বৈঠকে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা এখনই বলতে পারছি না। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”

জামায়াত মনে করে, ৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপি নেতার বৈঠকের পর যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ হয়, তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি। এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “এই কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আমরা তার বা তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে কিছু বলছি না। কিন্তু যেভাবে একটি দলের কথায় নির্বাচনের তারিখ বদলের ঘোষণা এল, তা মেনে নেওয়া যায় না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে ব্যাখ্যা করবেন।”

বৈঠক থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকরা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের কাছে জামায়াতের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী প্রতীকী বয়কট করেছে।” লন্ডনের বৈঠকই কি কারণ—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আপনারা বুঝে নেন।”

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, “জামায়াত কেন আসেনি সেটা তারা বলতে পারবে।”
জাতীয় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর জানান, “জামায়াতে ইসলামী আজ সংলাপে অংশ নেয়নি, তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা প্রতীকী বয়কট করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “একটি-দুইটি দলকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বোঝা যাবে না কোন দল কত বড়।”

সংলাপে আরও অংশ নেন জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সহসভাপতি আলী রীয়াজ। কমিশনের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান ও সফর রাজ হোসেন।

কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধাপে ধাপে আলোচনা চলবে। এতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, নারী প্রতিনিধিত্ব, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ যে বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে সেগুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে।

ঈদের আগে প্রথম দফার আলোচনা শেষে দ্বিতীয় দফার সংলাপ শুরু হয় ২ জুন।
গত অক্টোবরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারিতে জমা পড়ে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও জনপ্রশাসন—এই পাঁচটি বিষয়ে ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত চাওয়া হয়, যার মধ্যে ৩৩টি দল মতামত দেয়। ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৫টি অধিবেশনে প্রথম পর্বের সংলাপ শেষ করে কমিশন।

কিছু দলের সঙ্গে একাধিক দিনে বৈঠক করে আংশিক ও পূর্ণ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।