তাজনূভাকে জড়িয়ে ফোনালাপ ফাঁসের প্রচারণায় এনসিপির প্রতিবাদ

এক নারীর সঙ্গে এনসিপি নেতা সারোয়ার তুষারের ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে দলের আরেক নেত্রী তাজনূভা জাবীনকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলা প্রচারণার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি।
এ ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ভাবছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

সম্প্রতি প্রবাসী ফেইসবুকার জাওয়াদ নির্ঝরের পেইজে এক নারীর সঙ্গে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের ব্যক্তিগত কথোপকথন ফাঁস হয়। পরে সেই ফোনালাপের অডিও কপি করে আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীনের ছবি বসিয়ে অনেকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ওই ফোনালাপ সারোয়ার ও তাজনূভার মধ্যে হয়েছে।

আরেক প্রবাসী ফেইসবুকার ইলিয়াস হোসেনও এই ফোনালাপের সঙ্গে তাজনূভা জাবীনের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত করে প্রচার চালাচ্ছেন।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সারোয়ার তুষারকে কারণ দর্শাও নোটিস দিয়েছে এনসিপি। আর ডা. তাজনূভা ফেইসবুকে পোস্ট করে বলেছেন, ওই ফোনালাপে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

এনসিপির এক বিবৃতিতে বলা হয়, “জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি নারীদের প্রতি এই ধরনের নিপীড়ন ও যৌন হয়রানিমূলক ক্যাম্পেইনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। এই ধরনের ক্যাম্পেইন অব্যাহত থাকলে আগামীতে এনসিপি সব অনলাইন-অফলাইন নারী নির্যাতক ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সর্বশক্তি দিয়ে তা মোকাবেলা করবে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিওকল ফাঁসের ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীনকে জড়িয়ে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং পতিত ফ্যাসিবাদী দলের নেতাকর্মীরা চরম কুরুচিপূর্ণ, যৌন হয়রানিমূলক ও মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ প্রচার ও প্রপাগান্ডা কেবল নারীর প্রতি অবমাননা ও নিপীড়নের বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং এটি তাদের রাজনৈতিক কর্তাসত্তা ও সক্ষমতাকে অস্বীকার করা এবং রাজনৈতিক পরিসরকে সংকুচিত করার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।”

এনসিপি বলছে, “দীর্ঘ দেড়যুগের গুম-খুন-ধর্ষণ ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের পর জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে নারীরা নিজেদের কর্তাসত্তাকে পুনরুদ্ধার করেছেন। সুতরাং, তাদের প্রতি যে কোনো ধরণের অবমাননাকর ও নিবর্তনমূলক আচরণ জুলাই অভ্যুত্থানের মৌলিক আকাঙ্ক্ষা ও আদর্শকে অস্বীকার করে।”
“আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি—এমনকি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোর কিছু নেতাকর্মীরাও এই যৌন হয়রানিমূলক প্রচারণায় প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। অনেক অনলাইন মিডিয়া এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্বও এক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতা ও অপেশাদারত্বের পরিচয় দিয়েছেন।”

একটি মূলধারার দৈনিক পত্রিকাও তাজনূভা জাবীনকে জড়িয়ে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “যা জনপরিসরে উনাকে আরো বেশি অরক্ষিত করেছে এবং উনার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নমূলক মন্তব্যকে উসকানি দিয়েছে।”

সারোয়ার তুষার স্বীকার করেছেন যে ওই টেলি কথোপকোথন তার। তবে এভাবে ব্যক্তিগত আলাপের অডিও ফেইসবুকে প্রকাশের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।
১৭ জুন এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “দুই ব্যক্তির ব্যক্তিগত কথোপকথন বিনা অনুমতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়া জঘন্য কাজ। আমি ভুলের ঊর্ধে না। কিন্তু আমার তিন মাস আগের ব্যক্তিগত কথোপকথন কাঁটছাঁট করে পরিপ্রেক্ষিহীনভাবে অনলাইনে ছেড়ে দিয়ে আমাকে অপদস্থ করার মধ্যে কোনো গৌরব নাই।”

তাজনূভা জাবীনকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে সারোয়ার তুষার লেখেন, “এই স্মিয়ার ক্যাম্পেইন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার দলের কেন্দ্রীয় একজন যুগ্ম আহ্বায়ক নারী সহকর্মীকে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, তার সাথে আমার ছবি জুড়ে দিয়ে, জঘন্য কুৎসিত কথাবার্তা লিখে, ভিডিও বানিয়ে আমার আর তার নামে প্রচার করা হচ্ছে। যারা এই কুৎসিত কাজগুলো করছেন, দয়া করে করবেন না। রাজনৈতিক বিরোধিতা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে রাখার আহবান জানাই।”