নির্বাচন বিতর্কিত হলেও কমিশন দায়ী হতে পারে না বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে সোমবার রিমান্ড শুনানিতে তিনি এমন দাবি করেন।
এদিন ‘জনগণের ভোট ছাড়া’ নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে বিএনপির করা মামলায় নূরুল হুদার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরে বাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার।
তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য ১১টি কারণ আবেদনে তুলে ধরেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর এ নিয়ে শুনানিকালে সাবেক সিইসির কোনো বক্তব্য আছে কি না জানতে চান বিচারক।
বিচারক তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি শপথ ভঙ্গ করেছেন মনে করেন কি না?”
উত্তরে নূরুল হুদা ‘না’ সূচক উত্তর দেন। বলেন, নির্বাচন কমিশনে পাঁচটা লোক এবং তাদের সহযোগীতা করার জন্য ১৬/১৭ লাখ লোকের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করা। ঢাকায় বসে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা কোথায় কেমন নির্বাচন হচ্ছে দেখার সুযোগ নাই।
সামনে গিয়ে দাঁড়ান। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের বক্তব্য শোনেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানিতে বলেন, শেখ হাসিনার ‘ফ্যাসিবাদ’ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে ‘উল্লেখযোগ্য ভূমিকা’ পালন করেছেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা।
“পরবর্তীতে জনগণের হাতে কট। পুলিশ ধরার আগে পালিয়েছিলেন। জনগণ কট করেছে। জনরোষে পালিয়েছিলেন। জনতা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। উনাকে ফুলের মালা না কি যেন দিচ্ছে। এরা সেদিন মানুষ ও জনতার পক্ষে থাকলে হাসিনা এতো বড় ’স্বৈরাচার’ হত না। তার আমলে ২০১৮ সালে ভোট হয়। সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। সবাইকে আশ্বাস দিয়েছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের।”
তিনি বলেন, “কিন্তু তারা প্রতারণা করেছে। যে অবস্থা দেখে, জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট দেবে। ডিসিদের আগে থেকে নির্দেশ দেয় রাতেই ভোট দিয়ে দিতে। রাতে উৎসব করার জন্য টাকা দিয়েছে, বিরিয়ানি দিয়েছে। জাতি, বিশ্ব শুনল রাতের ভোটের কথা।”
ওমর ফারুক বলেন, “সাংবাদিকরা তার কাছে যান। বলে দেন, ভোট তো হয়েছে। কত বড় নির্লজ্জ, মিথ্যাবাদী হলে এমন কথা বলা যায়। এখনও তারা হাসে।
তাকে নিশি রাতের ইসি বলা হয়। আমি জানি না সে কীভাবে ছেলে, মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনকে মুখ দেখায়। সে জাতির সাথে প্রতারণা করেছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে জাতির সাথে, জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে।”
তিনি সাবেক সিইসির ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করেন।
রিমান্ডের বিরোধিতা করে নূরুল হুদার আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজীব বলেন, এখানে রিমান্ড শুনানিতে আইনের যে বিধান সেটি ’হাইলাইট’ করা হয়নি। আশপাশের কথা নিয়ে আসা হয়েছে।
“আমরা সেগুলোতে যাবো না। আসামির বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে সকল ধারাই জামিনযোগ্য। প্রসিকিউশন বেছে বেছে জামিনযোগ্য ধারায় তার রিমান্ড চেয়েছেন এটা আইনের সাথে সাংঘর্ষিক।”
রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জামিনযোগ্য ধারায় রিমান্ড চাইতে পারবেন এমন আইন দেখান।”
এসময় উপস্থিত আইনজীবীরা চিৎকার শুরু করলে এজলাসে হট্টগোল হয়।
আসামি পক্ষের এই আইনজীবী বলেন, “যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে তা আমাদের বিরুদ্ধে যায় না। এ মামলা আইনগতভাবে চলেই না। এটা ত্রুটিপূর্ণ এজাহার। তাছাড়া তিনি বয়স্ক, অসুস্থ একজন মানুষ।”
এসময় আসামি পক্ষের আরেক আইনজীবী বলেন, নূরুল হুদা মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরে মেজর জলিলের নেতৃত্বে সাব কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বে পটুয়াখালী জেলা হানাদার মুক্ত হয়েছে।
আগের দিন রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি।
এ মামলার আসামি হওয়ার ছয় ঘণ্টা পরই কথিত জনতা রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উত্তরার বাসা থেকে আটক করে নূরুল হুদাকে। আটকের সময় তারা তার ওপর চড়াও হয়। বাসায় ঢুকে অপদস্থ করা হয়। পরে পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়ে মিন্টো রোডে ডিবি অফিসে নিয়ে যায় এবং শেরে বাংলা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।