জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মধ্যে নির্বাহী বিভাগকে সর্বোচ্চ ‘নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রবণতা’ দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ তোলেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘এখন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রচেষ্টার মধ্যে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে, নির্বাহী বিভাগকে যত বেশি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অতীতে একজন স্বৈরাচার হয়েছিল, সেজন্য নির্বাহী বিভাগকে আমরা বিলুপ্ত করতে পারব না; দুর্বল করতে পারব না।
“সংসদীয় পদ্ধতিতে একজন স্বৈরাচার হয়ে উঠেছিল, সেজন্য আমরা আইনসভা বিলুপ্ত করে দিতে পারব না; দুর্বল করতে পারব না।”
বিএনপির এ নেতা মনে করেন, স্বৈরাচারের উৎপত্তি বন্ধ করতে হলে দেশে ‘স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই’।
‘‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সত্যিকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন যদি নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে, তাহলে এখানেই কিন্তু স্বৈরাচারের উৎপত্তিটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শুধু নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানো যাবে না।”
তিনি বলেন, “‘নির্বাহী বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে; বিচার বিভাগকে বিচার বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে; আইনসভাকে আইনের কাজ করতে দিতে হবে এবং সেখানেই থাকবে একটা কমপ্লিট ব্যালেন্স অব পাওয়ার।
“এটাকে আমরা আইনের ভাষায় বলি ‘সেপারেশন অব পাওয়ার থিউরি’, যেটার মূল কথা হলো, হারমোনিয়াস কোআপরেশন ইন বিটুইন অল দ্যা অর্গানস অব দ্যা স্টেট শুড বি স্টাবলিসড। তাহলে পরে কোনো অর্গান কোনো অর্গানের ওপরে এখতিয়ারের বাইরে হিয়ে অধিকার খাটাতে পারবে না।”
‘আলোচনার চেয়ে খানাপিনা বেশি চলছে’
সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আপনারা এখানে সংস্কার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু হতাশা কেউ ব্যক্ত করেন নাই।
“আমরা সবাই আশাবাদী মানুষ; আলোচনা চলছে; তারচেয়ে বেশি হয়ত খানাপিনা চলছে; সময় অনেক লাগছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা একটা জায়গায় ঐক্যে আসতে পারব।”
তিনি বলেন, “ঐক্যে আসার জন্য আমরা দলের পক্ষ থেকে কী কী বিবেচনায় নিয়েছি, তা আপনারা লক্ষ্য করেছেন।
‘‘আমরা ৭০ অনুচ্ছেদে সংস্কার এনেছি; সবাই একমত হয়েছে। এখন আমরা আরেকটা প্রস্তাব দিয়েছি যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সদস্যদের মধ্যে গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে এমপিরা ভোট দেবে। সেটা আরেকটা বিপ্লব হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ আমরা ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করলাম, সেটা কী আমাদের বড় অর্জন নয়?”
‘চোখ-কান খোলা রাখুন’
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘আমি শুধু আপনাদের সবাইকে বলব, চোখ-কান খোলা রাখবেন, খোরগোসের মত কানগুলো যেন সব সময় সতর্ক থাকে। চোখ খোলা থাকবে কেন, দেখেন সত্যি সত্যি কী হচ্ছে?
‘‘মূল নীতি নিয়ে যে বির্তক (জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে) হবে, সেখানে একটা প্রবণতাই হবে ধর্মকে বিশ্বাস করা, ধর্ম মানেন কিনা, ধর্মের কথা থাকবে কিনা, সংবিধানে এটা যুক্ত হবে কিনা? আমরা অনেকগুলো বছর পার করেছি, ধর্মে বিশ্বাস করেছি, কিন্তু সংবিধানে লিখেনি। কেন লিখেনি…আমার অন্তরে যেটা আছে সেটা আমার।”
তিনি বলেন, “আমি মুসলমান আমি এই ধর্মে বিশ্বাস করি, আমি তার কথা বলছি। কিন্তু এই রাষ্ট্রে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, তারাও তো আছে। তারা তো আমার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন।”
সভায় অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণফোরামের মোহাম্মদ উল্লাহ মধু ও নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার বক্তব্য রাখেন।