সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার জামিন শুনানিতে মারধরের শিকার হয়েছেন সময় টিভির সাংবাদিক আসিফ হোসাইন সিয়াম। এজলাসে থাকা কয়েকজন আইনজীবী তাকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাস পিয়াসের আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
গত ২৮ অগাস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক আলোচনা সভা থেকে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক পান্নাসহ ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। পরদিন সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় শাহবাগ থানা।
বৃহস্পতিবার লতিফ সিদ্দিকী ও পান্নার জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে আদালতে হাজির করা হয় কেবল সাংবাদিক পান্নাকে। দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে তাকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের অষ্টম তলায় ৩০ নম্বর এজলাসে নেওয়া হয়।
পান্নাকে দ্রুত কাঠগড়ায় নেওয়ার পর হেলমেট খুলে দেওয়া হলে পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা এমন কেন করছেন, আমি তো আপনাদের শত্রু নই।”
এ সময় সেখানে থাকা সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ জানতে চান, “ভাই আপনাকে কি জেলের ভেতরে নির্যাতন করা হয়েছে?”
জবাবে পান্না বলেন, “না।”
তখন আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহী মুক্তাদিরকে ধমক দিয়ে এজলাস থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। মুক্তাদির জবাব দেন, “আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা কেবলমাত্র বিচারকের আছে। উনি বললে বের হয়ে যাব। উনাকে বলতে দিন।”
এ কথা শুনেই ওই আইনজীবী মুক্তাদিরকে মারতে উদ্যত হলে সাংবাদিক আসিফ হোসাইন সিয়াম তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। ঠিক তখনই বিচারক এজলাসে প্রবেশ করে জামিন শুনানি শুরু করেন।
সিয়াম আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, “উনি বহিরাগত না, একজন সাংবাদিক।” এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে বেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে উঠে সিয়ামের কানে ঘুষি মারেন আইনজীবী মাহী। তখন সিয়াম হাতে থাকা মাইক্রোফোন তুলে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলে আইনজীবী তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই আইনজীবীর কয়েকজন সহযোগী সিয়ামকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করেন। যে যেভাবে পেরেছে, তাকে মেরেছে। চড়, থাপ্পড়, কিল, ঘুষি ও লাথিতে রক্তাক্ত হন সিয়াম।
এ পরিস্থিতিতে বিচারক এজলাস ছেড়ে খাসকামড়ায় চলে যান। পরে প্রসিকিউশনের পক্ষে থাকা কাইয়ুম হোসেন নয়ন ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে সাক্ষীর কাঠগড়ার কাছে নিয়ে আসেন। এ সময় আইনজীবীদের চাপে সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদকেও এজলাস কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
মারধরের পর সাংবাদিক সিয়াম বলেন, “কোনো কারণ ছাড়াই বিচারকের সামনে মব সৃষ্টি করে আমাকে মারধর করলো কয়েকজন আইনজীবী। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।”
দুপুর ৩টা ২৫ মিনিটে বিচারক আবার এজলাসে এসে শুনানি নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক পান্নার জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।
পরে আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহী সাংবাদিক মারধরের ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে মন্তব্য করেন। তবে তিনি দাবি করেন, মারধরের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।