ডিবি পরিচয়ে বাসায় হানা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে কলাবাগান থানার ওসি ও দুই এসআই বরখাস্ত

ডিবি পুলিশের পরিচয়ে গভীর রাতে এক বাসায় হানা দিয়ে চাঁদাবাজি, ভাঙচুর এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকির অভিযোগে ঢাকার কলাবাগান থানার ওসি মোক্তারুজ্জামানসহ দুই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট আব্দুল ওয়াদুদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি জানান, গত ২৯ এপ্রিল রাতে তার বাসায় ঢুকে পুলিশ সদস্যরা এই ঘটনা ঘটান। ডিএমপি কমিশনারের কাছে অভিযোগ করার পর ওসির সঙ্গে এসআই বেলাল ও এসআই মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম।

তিনি বলেন, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রথমে ওসি ও দুই এসআইকে রমনা বিভাগে সংযুক্ত করা হয় এবং পরে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, ওসি মোক্তারুজ্জামান সব বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেছেন এবং তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সোনারগাঁ রোডের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২৯ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে এসআই বেলালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও ১৫-২০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তার বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশ করে। অভিযোগ ২ মে দাখিল করলেও সেটির গ্রহণের তারিখ লেখা হয় ৪ মে। এরপরই অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার ও বরখাস্ত করা হয়।

ওয়াদুদ অভিযোগে উল্লেখ করেন, ঘটনার সময় তার ম্যানেজার ৯৯৯-এ ফোন করলে এক গাড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ পর শাহবাগ ও নিউ মার্কেট থানার টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু কলাবাগান থানার ওসি তাদের চলে যেতে বলেন।

এছাড়া, ষাটোর্ধ্ব ভাড়াটিয়া লাল মিয়া ও নাইট গার্ড লুৎফরকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন বলেও অভিযোগ করেন ওয়াদুদ। তিনি জানান, পুলিশ সদস্যরা তৃতীয় তলার দরজা ভাঙার চেষ্টা করে এবং ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ডিবি পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে বলেন।

ওয়াদুদ বলেন, পুলিশের সঙ্গে থানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এসআই বেলাল ও মান্নান তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভিতরে নিয়ে যায় এবং বাসায় তল্লাশি চালায়। কিছুক্ষণ পর এক পুলিশ সদস্য তাকে এক কোটি টাকা দিতে বললে মামলা হবে না জানায়। টাকা না দিলে ১০টি মামলা দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে দেন-দরবার করে দুই লাখ টাকা পুলিশ সদস্যদের হাতে তুলে দেন বলে জানান ওয়াদুদ। বাকি টাকা ব্যাংকিং আওয়ারে দেওয়ার শর্তে তিনজন সিভিল পোশাকধারী ব্যক্তি তাকে পাহারা দিতে বাড়িতে রেখে যায়। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। যাওয়ার সময় এসআই বেলাল কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি—এমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করে ভিডিও করে নিয়ে যায়।

ওয়াদুদ জানান, তিনি ২০০৬ সাল থেকে সরকারি লাইসেন্স নিয়ে বাড়ির পাশে একটি মিনি চিড়িয়াখানায় হরিণ ও দুর্লভ বিদেশি পাখি পালন করতেন। অভিযানে সেখান থেকে মূল্যবান পাখিগুলো লুট করা হয়। এছাড়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্কও নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযানটি ছয় ঘণ্টাব্যাপী চলে এবং কলাবাগান থানার ওসি তা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করেন।

পরে ১ মে ওয়াদুদের ল্যাপটপটি থানার পক্ষ থেকে ফেরত দেওয়া হলেও বাকি মালামাল এখনও ফেরত দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *