প্রধান উপদেষ্টার ফোনের পর জামায়াতের সংলাপে অংশগ্রহণ

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ফোন করে ‘নিরপেক্ষ থাকবেন’ বলে আশ্বাস দেওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেয় বলে জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপের তৃতীয় দিনে খাওয়ার বিরতিতে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

তাহের অভিযোগ করেন, প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশন এখন ইফ, যদিতে আছে, কিন্তুতে যাবে কিনা আল্লায় জানে।”

এর আগে মঙ্গলবার জামায়াত ঐ সংলাপে অংশ নেয়নি এবং পরে জানায়, তারা বৈঠকটি বয়কট করেছে।
গত ৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ ঘোষণাকে ‘যথাযথ নয়’ বলে মনে করে জামায়াত।
এই কারণে সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি বলে জানান এক জ্যেষ্ঠ নেতা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হামিদুর রহমান আযাদ জানান, “আমরা অন প্রোটেস্ট বৈঠকে যাইনি।”

নায়েবে আমির তাহের বলেন, “আমরা বিস্মিত যে, ২৪ ঘণ্টা অংশ না নেওয়ার কারণ বের করতে পারেননি। লন্ডন সফর নিয়ে আমরা প্রশ্ন করেছি ও আপত্তি জানিয়েছি।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গেছেন অ্যাওয়ার্ড আনার জন্য, টাকা ফেরতের জন্য এবং তার উপস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, সেটি আমরা স্বাগত জানিয়েছি।”

তাহের বলেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে হলে তাদের আপত্তি নেই।
“ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে সেটি আমাদের প্রস্তাবের মধ্যেই পড়ে। ফেব্রুয়ারির কথাও আমাদের প্রস্তাবের ভেতরে। আপত্তি নেই।
আমরা প্রশ্ন তুলেছি, জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা একটি তারিখ ঘোষণা করেছেন। আলোচনার মাধ্যমে সেটি পরিবর্তন হতে পারে। বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে তারিখ বদল হলেও আমাদের আপত্তি নেই।
তবে ভাষণের পরে দেশে এসে সেটি সংশোধন করা যেতো, কিন্তু তা হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছি, তিনি একটি দলের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এটা নজিরবিহীন। বহুদলীয় গণতন্ত্রে ১০০টির বেশি দল আছে।
এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সবাইকে যৌথ বিবৃতি দিতে হবে। এটি শুধু জামায়াতে ইসলামীর নয়, অনেক দলের জন্য বিব্রতকর।”

তাহের দাবি করেন, “আমাদের ধারণা হয়েছে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। এইভাবে চললে সংস্কার কমিশনও খুব বেশি এগুতে পারবে না।
এটি অনেকটা ‘পর্বতের মুষিক প্রসব’ হওয়ার মতো হবে, কার্যকারিতা হারাবে। সেই কারণে আমরা গতকাল সংলাপে আসিনি, প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়েছি।”

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ফোন করে তাদের আমিরের সঙ্গে কথা বলেন, এবং সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আশ্বাস দেন।
“ওনার আশ্বাসের ভিত্তিতেই আমরা আজকের বৈঠকে আসার সিদ্ধান্ত নিই। জাতীয় পর্যায়ে কোন দল উপকৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এই চিন্তা না করে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।”

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকার কঠোর না হলে আবারো স্বৈরাচারী নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দেখলাম হঠাৎ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কথা বলছেন। তিনি এক মাসেও একটি ভবনের তালা খুলতে পারেননি, ৩০০ আসনের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করবেন?”

নারীদের জন্য ১০০ আসন সরাসরি নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, “সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে হলে আপত্তি নেই। তবে তা আগে নির্ধারণ না করলে মতামত দেওয়া কঠিন।
কারণ ইফ, যদি ইত্যাদি দিয়ে চূড়ান্ত সমাধান হয় না। ঐকমত্য কমিশন এখন ইফে আছে, যদিতে আছে, এর পরে কিন্তু হবে কিনা আল্লাহ ভালো জানেন।”

বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমির ‘দোয়েল মাল্টিপারপাস হল’-এ পৌঁছান জামায়াতের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
মিলনায়তনের দরজার সামনেই ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার জামায়াত প্রতিনিধি দলের নেতা তাহেরকে শুভেচ্ছা জানান। করমর্দন ও হাস্যোজ্জ্বল কুশল বিনিময় করেন তারা।

পরে জামায়াত নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার এবং লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও তাহেরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ইরান বলেন, “ভাই একেবারে টেনশনে ফেলে দিয়েছিলেন। ফিরে এসেছেন। আমরা সবাই একসাথে নতুন বাংলাদেশ গড়ব।”