বক্তব্য দিতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলে হট্টগোল করে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে বের হয়ে যান সিপিবি ও গণফোরামের নেতারা। তবে কমিশনের সদস্যদের হস্তক্ষেপে ফের সংলাপে ফেরেন তারা।
বুধবার ঢাকার বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের তৃতীয় দিনের আলোচনায় এ ঘটনা ঘটে। বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয় এ আলোচনায়।
বিকাল পৌনে ৪টার দিকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হইচই করে সংলাপ বয়কট করে বের হয়ে আসেন। সে সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এখানে কীসের সংলাপ হচ্ছে, কার সঙ্গে সংলাপ করব। তারা যা ইচ্ছা তাই করছে। অন্তর্বর্তী সরকার যতদিন নিরপেক্ষ থাকবে না, ততদিনের জন্য আমরা বয়কট করেছি।”
হট্টগোল করে আলোচনা থেকে একইভাবে বের হয়ে আসেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বৈষম্য হচ্ছে অভিযোগ করে প্রিন্স বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর তিনজনকে বক্তব্যের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আরও অনেকে বক্তব্য রাখছেন, অথচ আমাদের কাউকে দেওয়া হচ্ছে না।”
সংলাপ থেকে বেরিয়ে যান বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমও।
বের হয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, “নিরপেক্ষতার বিতর্কে আমরা সাত থেকে আটটি দল ওয়াকআউটের জন্য দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। পরে দুটি দল বয়কট করে বের হয়ে যায়। আর আমি ব্যক্তিগত কাজের জন্য সংলাপ থেকে বের হয়ে এসেছি।”
বেলা সাড়ে ১১টায় শুরুর পর রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এরপর খাবারের বিরতির পর বেলা ৩টায় ফের সংলাপ শুরু হয়।
বিকাল পৌনে ৪টার দিকে দোয়েল মাল্টিপারপাস হলের ভেতরে তাদের ‘কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না’ বলে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন সিপিবি ও গণফোরাম নেতারা। ওই সময়ে ভেতরে অন্যান্য দলের রাজনৈতিক নেতারা বসে ছিলেন।
সিপিবি ও গণফোরামের দুই নেতা সংলাপস্থলের বাইরে বের হয়ে আসার পর কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার এবং উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ভেতরে ফিরিয়ে নিয়ে যান।
বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সংলাপ চলবে বলে শুরুতে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
শাহাদাত হোসেন সেলিম সংলাপ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর পর সাড়ে ৪টার দিকে বের হয়ে যান গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন।
বৈঠকে রয়েছেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের সংলাপ বয়কট করেছিল জামায়াতে ইসলামী। তবে একদিন পরই এদিনের আলোচনায় যোগ দেয় এই দলটি।
সংলাপে ফেরার পর হাসিমুখে তাদের স্বাগত জানিয়েছেন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা। কেউ কেউ তাদের সঙ্গে করমর্দন করেছেন, কেউবা বুকে জড়িয়ে কোলাকুলি করেছেন।
মিলনায়তনের দরজার সামনেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে শুভেচ্ছা জানান। তারা হাসিমুখে করমর্দন করেন।
পরে জামায়াত নেতৃবৃন্দ হেঁটে হেঁটে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও জামায়াতের নায়েবে আমিরের সঙ্গে করমর্দন করেন, শুভেচ্ছা জানান।
মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কোনো সদস্য অংশ নেননি। পরে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বৈঠকটি বয়কট করেছে।
গত ৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পরে যে যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়, তা যথাযথ হয়নি বলে মনে করছে জামায়াত।
এর প্রতিবাদে জামায়াত কমিশনের বৈঠক বয়কট করেছে বলে দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা মঙ্গলবার জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “আমরা অন প্রোটেস্ট বৈঠকে যাইনি।”